সার্কুলার জারিতে বিলম্ব, দুই মাসেও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েনি চট্টগ্রাম বন্দরে
সরকারি সার্কুলার জারি করতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ানো যাচ্ছে না দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটিতে (চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল) গত ১৬ জানুয়ারি পরীক্ষামুলকভাবে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়ানো হয়। এরপর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে ভিড়ে ২০০ মিটার দৈর্ঘের আরো একটি জাহাজ।
তবে জাহাজ ভিড়লেও হয়নি পণ্য খালাস কার্যক্রম। জাহাজ ভিড়ানোর প্রায় দুই মাস হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম বন্দর ড্রাফট বৃদ্ধি সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেনি।
এর ফলে জাহাজ কোম্পানিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বড় আকারের কন্টেইনার জাহাজ আনার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছে জাহাজ মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা।
একাধিক জাহাজ মালিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘের জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতা। এর কোন সুফল এখনো পাওয়া যায়নি।
শিপিং খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ড্রাফট বৃদ্ধির সার্কুলার জারি না হওয়া পর্যন্ত শিপিং কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে বড় জাহাজে বেশি পণ্য পরিবহনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা আপাতত পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। অবিলম্বে সার্কুলার জারি করে বড় জাহাজ ভিড়ানোর পথ সুগম করার দাবি জানান তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘের জাহাজ ভিড়ানোর বিষয়ে সার্কুলার জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ টিবিএসকে বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দর সার্কুলার জারি করলে তা আমাদের প্রিন্সিপাল, মেইন লাইন অপারেটরদের অবহিত করতে পারতাম। বিষয়টি নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি বন্দর শীঘ্রই এই সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করবে।"
চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৪ সালে ৯.২ মিটার ড্রাফট থেকে ৯.৫ মিটার এবং ১৮৬ মিটার থেকে ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সক্ষমতা বাড়ানোর পর নিয়ম অনুযায়ী ড্রাফট ও দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হয়।
আট বছর পর ২০২২ সালে আবারো জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়ানোর সক্ষমতা বাড়ায় বন্দর। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জানুয়ারি এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি ভিড়ানো হয় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ।
সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা এবং ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ কন্টেইনার বহন করা যায়। ১০ মিটার গভীরতার জাহাজগুলোর মাধ্যমে বন্দরে ৩ হজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার কন্টেইনার বহন করা সম্ভব হবে।
একইভাবে, বাল্ক কার্গো জাহাজে ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন খোলা পণ্য বেশি পরিবহন করা সম্ভব হবে।
বেশি পণ্য পরিবহনের কারণে জাহাজ ভাড়া, পণ্য পরিবহন, পণ্য খালাসের খরচ কমে আসবে বলে জানিয়েছেন শিপিং খাতের ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ১৩৫টি জাহাজ বেশি এসেছে। ২০২১ সালে বন্দরে জাহাজ আসে ৪২০৯টি। ২০২২ সালে জাহাজ আসে ৪৩৪৪টি।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর ২০২২ সালে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ২.২৮ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ৩.২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমে যায় ২.৬০ শতাংশ।
২০২১ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৩২,১৪,৫৪৮ টিইইউ। ২০২২ সালে হ্যান্ডলিং হয় ৩১ লাখ ৩৩ হাজার ২০ টিইইউ।
ওয়েভার সনদ সংক্রান্ত জটিলতা কাটেনি
ওয়েভার সনদ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে গত ১ মার্চ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হলেও এখনো জটিলতা কাটেনি বলে জানিয়েছে শিপিং খাতের ব্যবসায়ীরা। ওয়েভার জটিলতায় চট্টগ্রাম-কলম্বো এবং চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর রুটে অন্তত ৮টি জাহাজে কন্টেইনার বোঝাই বিলম্ব হচ্ছে।
বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন এএস চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে বৈঠকের পর আমরা আশা করেছিলাম সংকটের সমাধান হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সমাধান হয়নি। আমার প্রতিষ্ঠান সী কনসোর্টিয়াম, ক্রাউন নেভিগেশন, বিজিক্স সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ওয়েভার সনদ সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছে।"
এদিকে ওয়েভার সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে গত ২ মার্চ চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) বিধি অনুসারে, আবেদনের তিন কার্যদিবসের মধ্যে মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস কর্তৃক ওয়েভার সার্টিফিকেট ইস্যু করার কথা। কিন্তু ফিডার অপারেটররা বলছেন, এ প্রক্রিয়ার জন্য কমপক্ষে ১০ বা তার বেশি দিন সময় নেওয়া হচ্ছে।
ওয়েভার সনদ নিয়ে জটিলতার বিষয়ে নৌ বাণিজ্য দপ্তর (মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস) এর প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।