৯ মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না অনাবাসিক চিকিৎসকরা
গত নয় মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে ২০২১-২০২৩ ও ২০২২-২৪ সেশনে অনাবাসিক ডিপ্লোমা/এমফিল/ এমপিএইচ কোর্সে অধ্যয়নরত ১৫০০ চিকিৎসক।
জমানো টাকা, বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ও ধার দেনা করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। ভাতার দাবিতে বুধবার (২৯ মার্চ) বিএসএমএমইউতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তারা।
২০২০ সালের অক্টোবরে বিএসএমএমইউ এর সিন্ডিকেট মিটিংয়ে বিএসএমএমইউতে অধ্যয়নরত অনাবাসিক চিকিৎসকদের প্রতি মাসে ২০ হাজার করে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ সিদ্ধান্তের পর ২০২০-২০২২ সেশনে ভর্তি হওয়া ৭৫০ জন চিকিৎসক কোর্স শেষ হওয়া পর্যন্ত ভাতা পেয়েছেন। তার পরের সেশনের (২০২১-২০২৩) ৭৫০ জন চিকিৎসক এক বছর ভাতা পেয়েছেন। গত বছরের জুনের পর তারা আর ভাতা পান নি।
এদিকে, ২০২২-২০২৪ সেশনের অনাবাসিক চিকিৎসকেরা এখন পর্যন্ত এক মাসও ভাতার টাকা পান নি।
এমবিবিএস পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য এসব কোর্সে ভর্তি হয়েছে তরুণ চিকিৎসকরা। কোর্সের দুই বছর তাদের বাইরের কোন হাসপাতালে চাকরি করার অনুমতি নেই।
ভাতা না পাওয়ায় এমবিবিএস পাশ করা এ চিকিৎসকেদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে কষ্ট করতে হচ্ছে।
বিএসএমএমইউ এর অধীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অধ্যায়নরত চিকিৎসকদের মধ্যে যারা ডিপ্লোমা করছে তারা বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেলে পড়াশোনার পাশাপাশি রোগীদের সেবাও দেয়।
ধার করে পড়ার খরচ চালান তরুণ চিকিৎসকরা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএমএমইউতে অধ্যয়নরত ২০২১-২০২৩ সেশনের এক চিকিৎসক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত বছরের জুলাই মাস থেকে তিনি ভাতার টাকা পান না।
"ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটের মেসে থাকা-খাওয়ায় খরচ হয় মাসে ১০ হাজার টাকা। এমবিবিএস পাশ করার পর চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করে যে বেতন পেয়েছিলাম সেখানকার জমানো টাকা দিয়ে পড়ার খরচ চালাচ্ছি," বলেন তিনি।
জুলাই ২০২২-২০২৪ সেশনে ঢাকা মেডিকেলে অধ্যায়নরত এক চিকিৎসক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোর্সে ভর্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ভাতা পান নি তিনি।
"মেডিকেল কলেজে পড়া শেষে রাজধানীর একটা প্রাইভেট মেডিকেলে ৬ মাস চাকরি করার পর এমফিল কোর্সে চান্স পাই। ভতি হতে ৫৩ হাজার টাকা লেগেছে। এখন পরীক্ষা দিতে ফি দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। পরীক্ষায় পাশের হার খুবই কম। একটা সাবজেক্ট খারাপ করলে আরো ১৫০০০ টাকা দিতে হয়। বাসা থেকে টাকা নিয়ে চলতে হচ্ছে," বলেন তিনি।
এই চিকিৎসক আরো বলেন, "মানুষ মনে করে ডাক্তার হয়েছি, অনেক টাকা। কিন্তু টাকার অভাবে আমরা যে কতটা মানবেতর অবস্থায় আছি তা তো কাউকে বোঝাতে পারবো না।"
২০২২-২০২৩ সেশনে অধ্যয়নরত এক চিকিৎসক বলেন, এ ভাতা পাকিস্তানে ৫৬ হাজার টাকা, ইন্ডিয়াতে ৮০ হাজার টাকা দেয়।
"আমাদের পে স্কেলের সাথে মিল রেখে ভাতাটা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। তা না করে ২০ হাজার টাকা ভাতা প্রতি মাসে পাওয়ার জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে," বলেন তিনি।
অনাবাসিক চিকিৎসকদের ভাতার বিষয়টি দ্রুত সমাধানের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সেক্রেটারি জেনারেল ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এমবিবিএস পাশ করার ডাক্তাররা হায়ার এডুকেশনের সময় যে ২০ হাজার টাকা পায় তা আসলে অনেক কম।"
"এখন দ্রব্যমূল্য যে পরিমাণ বেড়েছে, এই ভাতা দিয়ে এক মাস চলা কঠিন। ৯ মাস ধরে ভাতা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সামনে ঈদ; তার আগেই জরুরি ভিত্তিতে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি সমাধান করার আহ্বান জানাচ্ছি," বলেন তিনি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, অনাবাসিক ডাক্তারদের মধ্যে যারা বেতন পায়না দ্রুত তাদের ভাতা দেওয়া উচিৎ। আর আবাসিকদের বেতন আরো বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ তারা সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়। বেতন কমের কারণে যদি মেন্টালি তারা ফিট না থাকে তাহলে মানুষকে সার্ভিস দিবে কিভাবে?"
অনাবাসিক ১৫০০ চিকিৎসকের ভাতার জন্য ৩৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ চেয়ে ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছিল বিএসএমএমইউ ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শরফুদ্দিন আহমেদ।
এ চিঠির জবাবে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা থেকে জানানো হয় আবাসিক চিকিৎসকদের ভাতার জন্য ইন্টেগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমে ৩৪ কোটি টাকা এন্ট্রি করা হয়েছে এবং তা ২০২২-২০২৩ অথবছরের ৩৬৩১১০২ ভাতা বাবদ সহায়ক কোডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিএসমএমএমইউ আবার কেনো আবাসিক চিকিৎসকদের ভোতার জন্য টাকা চেয়েছে তা স্পষ্ট করতে বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তবে বিএসএমএমইউ ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শরফুদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "এখনো আমরা ভাতার টাকা পাইনি। আমরা চেষ্টা করছি অনাবাসিক ডাক্তাররা যাতে দ্রুত টাকাটা পায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয়ে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছি যাতে দ্রুত ভাতার ব্যবস্থা করা যায়।"