রুমা-থানচি সড়কে ব্যাপক পাহাড় ধস
গত এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারী বৃষ্টির কারণে ব্যাপক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে বান্দরবানে। এখনও রুমা-থানচি সড়কে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে রয়েছে পাহাড় ধসের স্তূপ।
কোনো কোনো জায়গায় পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাহাড় ধসের জায়গায় বিদ্যুতের খাম্বা উপড়ে গিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে সড়কে। এছাড়া পড়ে রয়েছে বড় বড় পাথরখণ্ডও। বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কেও বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রুমা-থানচি সড়কে মিলনছড়ি এলাকায় চারটি পয়েন্টে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। সড়কের মাঝখানে পড়ে আছে ধসের স্তূপ, পাথর ও কাদামাটি। সেগুলো সরিয়ে কোনোরকমে হাঁটাচলা করতে দেখা যায় স্থানীয়দের। কোনক্রমে চলাচল করতে পারে মোটর সাইকেলও।
বান্দরবান জেলা শহর থেকে চিম্বুক পাহাড় হয়ে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গেলে পড়ে ওয়াইজংশন এলাকা। সেখান থেকে ভাগ হয়ে একপাশ দিয়ে চলে গেছে রুমা সড়ক, আরেকপাশ দিয়ে থানচি সড়ক। ওয়াইজংশন এলাকা থেকে রুমা সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াইজংশন থেকে অল্প দূরত্বে দুটি জায়গায় সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়েছে।
অন্যদিকে জেলা শহর থেকে থানচি সড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত মোটর সাইকেল করে যাওয়া যায়। এরপর থেকে আর যাওয়ার সুযোগ নেই। এই ৩০ কিলোমিটার এলাকায় পাতুই ম্রো পাড়ায় সড়কের একটি অংশ পুরোপুরি ধসে পড়েছে।
রাস্তা দেখতে আসা টংকাবতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্লুকান ম্রো বলেন, ধসে পড়া সড়কের পশ্চিম অংশে টংকাবতি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পাতুই পাড়া পড়েছে। পূর্ব অংশ পড়েছে রুমা গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুড়াবাংলা ম্রো পাড়া। স্থানীয় পাড়াবাসীরা আপাতত ধসে পড়া সড়কের পেছনে একটি পাহাড় পার হয়ে চলাচল করছে।
চিম্বুক পাহাড়ে বাগান পাড়ার বাসিন্দা মেনরাও ম্রো দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বৃষ্টির মধ্যেও গত রোববার এম্পু পাড়া থেকে নিজের বাগান পাড়ায় ফিরছিলাম। তখনও এই রাস্তা ভাল ছিল। পরের দিন সোমবার দুপুরে যখন আবার এম্পু পাড়ায় ফিরি তখন এই রাস্তাটাই নাই হয়ে গেছে। সড়কে বিশাল অংশ ধসে গিয়ে পাহাড়ের নিচে চলে যায়। বৃষ্টি হলে মাটির নরম অংশ আরও ধসে যেতে পারে।'
স্থানীয়রা জানান, ৩০ কিলোমিটার এলাকার পরে থানচি সদর পর্যন্ত আরও বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ধসে গেছে। কোথাও কোথাও সড়কের উপর পাহাড় ধসে পড়েছে। বিশেষ করে নীলগিরি, নীলদিগন্ত ও বলিপাড়ার দিকে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে বেশি।
তবে রুমা ও থানচির বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিকল্প পথ হিসেবে নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান লাইনম্যান মো. মামুন।
শুক্রবার বিকালে লাইনম্যান মো মামুন টিবিএসকে বলেন, সড়ক যোগাযোগ পথ বন্ধ থাকায় বান্দরবান থেকে সাঙ্গু নদীর পথে রুমা-থানচি যাওয়া যাবে। শহরের ক্যচিংঘাটনা এলাকা থেকে সড়ক ভালো না হওয়া পর্যন্ত নৌকা চলাচল করবে।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে রুমা-থানচি সড়কে ধসে পড়া মাটি সরানো ও মেরামত কাজ শুরু করেছে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের আওতাধীন সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি (নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন)।
সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি ওয়ারেন্ট অফিসার রাহুল হাসান পার্থ সাংবাদিকদের বলেন, বান্দরবান থেকে রুমা-থানচি সড়কটি যত দ্রুত সম্ভব চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। তবে পাহাড় ধসে সড়কের উপর বিদ্যুতের তার পড়ে থাকায় কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। ঠিক কতদিনের মধ্যে যান চলাচলের উপযোগী করা হবে বলা যাচ্ছে না।