আমিনবাজারে পুলিশ চেকপোস্ট: চলছে গণহারে আটক-মোবাইল তল্লাশি
রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় চলমান পুলিশ চেকপোস্টে শনিবার (২৮ অক্টোবর) তল্লাশি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্দেহ হলে ঢাকাগামী যাত্রীদের অনেকটা গণহারে আটক করছে পুলিশ সদস্যরা।
সকাল ৭ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টায় ঢাকাগামী অন্তত শতাধিক ব্যক্তিকে এই চেকপোস্ট থেকে সন্দেহভাজন হিসাবে আটক করেছে পুলিশ।
এছাড়াও শুক্রবার রাতে আশুলিয়া বাজার এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট থেকে একটি বাসসহ ৪৩ জন জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জামায়াত নেতাকর্মীদের আটক প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস এন্ড ট্রাফিক) আব্দুল্লা হিল কাফী বলেন, আশুলিয়া থানায় কিছু জামায়াত নেতাকর্মী আটক আছে, তবে ঠিক কতজন তা এই মুহুর্তে বলতে পারছি না।
চেকপোস্টে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাশকতা ও যে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা এড়াতে ঢাকার সাভারের আমিনবাজার, বিরুলিয়া, আশুলিয়া ব্রিজ এলাকা ও ধামরাইয়ের ইসলামপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমিনবাজার এলাকায় সরকারি ২০ শয্যা হাসপাতালের সামনে পুলিশের চেকপোস্ট ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে চলাচলরত অধিকাংশ যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছে পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে চেকপোস্ট কার্যক্রমের জেরে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের আমিনবাজার থেকে তুরাগ পর্যন্ত প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলরত হাজারো যাত্রী।
চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যাত্রীদের জাতীয় ও পেশাগত পরিচয়পত্র যাচাই করা ছাড়াও সন্দেহ হলে যাত্রীদের মুঠোফোন তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা।
এসময় যাত্রীদের কাছে তাদের গন্তব্য, তারা কোথা থেকে আসছেন, কোথায় এবং কেন যাচ্ছেন এসব জানতে চাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
কোন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে, তাদের মুঠোফোনের গ্যালারিতে বিএনপি সংশ্লিষ্ট কোন ছবি পাওয়া গেলে কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কাছে আশানুরূপ জবাব দিতে ব্যর্থ হলেই তাকে আটক করে চেকপোস্ট সংলগ্ন আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে।
এসময় পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে ওয়াকিটকি হাতে সাদা পোশাকধারী কিছু ব্যক্তিদেরও যাত্রীদের মুঠোফোন ঘেঁটে দেখতে ও লোকজনকে আটক করতে দেখা গেছে।
চেকপোস্টে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস এন্ড ট্রাফিক) আব্দুল্লা হিল কাফী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহাসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।
আমিনবাজার চেকপোস্টে উপস্থিত ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস এন্ড ট্রাফিক) আব্দুল্লা হিল কাফী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, যেহেতু রাজধানীতে বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ রয়েছে, কাজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা আসছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। কাজেই মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ যেকোন প্রকার নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমাদের এই চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। তাই সন্ত্রাস ঠেকাতে ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এই কার্যক্রম।
এসময় যাত্রীদের মুঠোফোন তল্লাশি ও আটক প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা টিবিএস'কে বলেন, অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ তাদের পরিচয়পত্র, বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। সেক্ষেত্রে আমাদের এসব কার্যক্রম (মুঠোফোন তল্লাশি) করতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আমরা আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করছি।
তবে চেকপোস্ট থেকে ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে সেই সংখ্যা উল্লেখ করেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।