খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৭ আসনে স্বতন্ত্র কারা?
২০১৮ সালে ভাগ্যের ফেরে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে এমপি হন রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী। বিএনপির ছায়ায় সেবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করেন। তবে এমপি হওয়ার পর বিএনপির সাথেই তার 'দূরত্ব বাড়ে'।
এবারও তিনি একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরিসংখ্যান বহুমুখী বার্তা দিচ্ছে।
শুধু গোলবাগীই নন, এই আসনে এবার ১৬ জন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে অনেককে এলাকার মানুষ কোনোদিন দেখেননি।
বগুড়া-৭ আসনে মোট ২৫ জন প্রার্থী ভোট করবেন। এ আসনটি 'জিয়া পরিবারের আসন' হিসেবে পরিচিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান– গাবতলী ও পাশের উপজেলা শাজাহানপুর নিয়ে এ আসন গঠিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই এ আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পান দলের গাবতলী উপজেলার সভাপতি মোরশেদ মিলটন। কিন্তু, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হলে আসনটি বিএনপির প্রার্থী শূন্য হয়ে যায়।
এখানে আওয়ামী লীগেরও প্রার্থী ছিল না। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খানের পক্ষে। তিনি গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আজম খানের স্ত্রী এবং শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রফি নেওয়াজ খানের শাশুড়ি। এই অবস্থায় ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয় স্থানীয় বিএনপি। পরে সংসদ সদস্য হন তিনি।
বর্তমান সংসদ সদস্য বাবলু পাঁচ বছর আগে হলফনামায় উল্লেখ করেন, তার বার্ষিক আয় ৫ হাজার টাকা। ভোটে দাঁড়ানোর আগে জমা টাকা ছিল ৩০ হাজার। চলাফেরা করতেন একটি পুরোনো মোটরসাইকেলে। তবে সংসদ সদস্য হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই ভাগ্য খুলে যায়। দুই মাসের মাথায় ৩৪ লাখ টাকার গাড়িতে চড়া শুরু করেন। ওই সময় গাড়ি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদও প্রকাশ হয়।
দৈনিক 'সমাচার' পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন এনামুল রাঙ্গা। গাবতলীর বালিয়াদিঘীর বাসিন্দা এনামুল বিএনপির দুর্গখ্যাত বগুড়া-৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদে যেতে চান। জমা দিয়েছেন মনোনয়ন।
শাজাহানপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মিলন। 'এস টিভি' নামে বেসরকারি গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা করেন। তারই সাবেক সহকর্মী রেজাউল করিম বাবলুর বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন তিনিও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাফুদ্দৌলা সরকার আওয়ামী লীগের সমর্থক। গতবার শাজাহানপুরে আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভোট করে হেরেছেন। এবার এমপি হতে চান।
মো. মেসবাউল আলম বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খরনা এলাকার বাসিন্দা। উপজেলার পারতেখুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। আগেও কয়েকবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন।
গত বছর শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হন মেহেরুল আলম মিশু। এলাকার লোকজন তাকে খুব বেশি চেনেন না।
নাজির মাহমুদ রতন পেশায় কৃষক। ভোটের মাঠে গত জাতীয় নির্বাচনেও স্বতন্ত্রভাবে ছিলেন। এবারও দাঁড়িয়েছেন। তিনি গাবতলীর কাগইল এলাকার বাসিন্দা। তবে এলাকার বাহিরে তেমন বের হন না বলে এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
বগুড়া-৭ আসনে এবার তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হওয়ার বড় গুঞ্জন ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদলের বিরুদ্ধে। তবে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিএনপিতে যোগ দেওয়া বাদল মাঠের শক্তিশালী খেলোয়াড় বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ২০০৩ সালে তিনি সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন। পরে সদর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে শাজাহানপুর উপজেলা গঠিত হলে ২০১৪ সালে বিএনপির সমর্থনে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালে বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে পাননি তিনি। সর্বশেষ ২০২২ সালে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন।