ঢাকায় যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন, মা-শিশুসহ নিহত ৪
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে মা-ছেলেসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে,আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেন, "নেত্রকোনা থেকে ট্রেনটি সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছায়। খিলক্ষেত এলাকায় পৌঁছালে যাত্রীরা আগুন দেখতে পান। পরে তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেনটি থামানো হয়।"
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া সেলের উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার ইউএনবিকে জানান, ভোর ৫টা ৪ মিনিটের দিকে ট্রেনের তিন বগিতে আগুন লাগে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার পরিদর্শক মো. ফেরদৌস জানান, নিহতদের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- নাদিরা আক্তার পপি (৩২) ও তার ৩ বছরের ছেলে ইয়াসিন। নাদিয়ার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। তার বাবার নাম ফজলুর রহমান। তেজগাঁও তেজতুরীপাড়ায় স্বামী মিজানুর রহমানের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
নিহত নাদিরার ভাই হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, তাদের বাড়ি নেত্রকোণার সদর উপজেলার বরুনা গ্রামে। ঢাকায় তারা তেজগাঁও তেজতুরী বাজার এলাকায় থাকেন। নাদিরার স্বামী মিজানুর কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী।
গত ৩ ডিসেম্বর তারা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন বলে জানান নাদিরার ভাই হাবিব। সেখান থেকেই গত রাত ১২টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে রওনা হয়েছিলেন ঢাকায় ফিরতে। ভোরে তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। সঙ্গে ছিলেন তার বোন নাদিরা ও তার দুই ছেলে ইয়াসিন (৩) ও ফাহিম (৮)।
হাবিব আরও বলেন, তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেনের পেছনের সিট থেকে আগুন জ্বলে উঠে। মুহূর্তেই আগুন পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে দৌড়ে তিনি ফাহিমকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামতে পারলেও ভেতরে আটকা পড়েন ইয়াসিন ও তার মা নাদিরা। তাদের আর কোনোভাবেই বের করতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোক এসে তাদের মরদেহ বের করে।
নিহতদের মধ্যে নাদিয়া ও তার শিশুসন্তান ছাড়া অন্য দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
ভোর ৬টার দিকে নিহতদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কমলাপুর রেলওয়ে থানার পরিদর্শক মো. ফেরদৌস। এর আগে মরদেহগুলো কমলাপুর রেলস্টেশনে রাখা হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ভোর ৫টার দিকে বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর তাতে আগুন দেখতে পান যাত্রীরা।
আতঙ্কিত যাত্রীরা ভেতরে চিৎকার শুরু করেন।
তবে আগুন লাগার বিষয়টি লোকোমাস্টার প্রথমে বুঝতে পারেননি বলে জানান তারা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনটি তেজগাঁও পৌঁছে যায়।
সেখানে থামার পর যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করেন।
তবে তিন বগিতে মধ্যে আটকা পড়েন চারজন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভেতর থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সকালে নিজ জেলা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেন অগ্নিকাণ্ডে আহত হন একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের অ্যাডমিন অফিসার নুরুল হক।
তিনি বলেন, "আমি শুধু আগুন, আগুন চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। এরপরে ট্রেন থেকে লাফ দিয়েছি।"
ঢাকা রেলওয়ে থানার মরদেহ বাহক আল আমিন টিবিএসকে জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তারা তেজগাঁও রেলস্টেশনে ছুটে যান এবং সকাল ৬টায় লাশ ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
তিনি জানান, মরদেহগুলো আগুনে প্রায় সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। মা-ছেলের মরদেহ রাখা হয়েছে একটি ব্যাগে; আগুনে পোড়ার কারণে তাদের মরদেহ একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত অবস্থায় রয়েছে।
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে গত মাস থেকে প্রায়ই ট্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
তবে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
এর আগে, গত ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা কমিউটার ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে আগুন লাগে।
ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে যায় ট্রেনের তিনটি বগি।
গত ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেলস্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের দুই বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
রোববার বেলা সোয়া ১টার দিকে বিএনপির ডাকা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির মধ্যে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে।
এছাড়া, ২৩ নভেম্বর সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে উপবন এক্সপ্রেস নামের আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়ানোর সময় ট্রেনের এসি চেয়ার বগিতে আগুন দেওয়া হয়।