ভরা মৌসুমে জাহাজ বন্ধে হুমকিতে সেন্টমার্টিনের পর্যটন খাত
বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যে নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ রুটে সমস্ত পর্যটন জাহাজ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দ্বীপকে কেন্দ্র করে পর্যটন খাতে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, বছরের এই সময়টা সেন্টমার্টিনে পর্যটনের ভরা মৌসুম। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে চাঙা হয়ে ওঠা পর্যটন ব্যবসা মাঝপথে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এর ধকল এ বছরে আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তারা।
জাহাজ বন্ধের খবর আসার পরপরই হোটেল ও রিসোর্ট বুকিং বাতিল হতে শুরু করে। একইসঙ্গে চাপ বাড়ে ফিরতি বাস টিকেটের। সুযোগ বুঝে বাস এজেন্টরা যাত্রীদের কাছ থেকে দেড় থেকে দুইগুণ ভাড়া দাবি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিয়ানমারের জান্তার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষের কারণে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এই রুটে জাহাজ পরিষেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা মর্টারের আঘাতে বাংলাদেশের ভেতরে দুইজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
বুধবার রাতে সংবাদমাধ্যমে জাহাজ বন্ধের খবর প্রচারিত হবার পরই অস্থিরতা তৈরি হয় পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত বুকিং ছিল দ্বীপের সমুদ্র কুটির রিসোর্টের সবকটি রুমের। কিন্তু আকস্মিক সিদ্ধান্তে একে একে বাতিল হচ্ছে বুকিং।
রিসোর্টের ইনচার্জ মোহাম্মদ হেলাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের মাত্র ব্যবসা শুরু হয়েছে। হরতাল, অবরোধ ও নির্বাচনের কারনে পর্যটক আনাগোনা ছিল খুবই কম। স্টাফদের বেতন দেয়াই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ভেবেছিলাম ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু এখনই সব শেষ। স্টাফদের আবারও কক্সবাজার পাঠিয়ে দিতে হবে। কারণ এখানে থাকলে তাদের পেছনেও খরচ।'
একইভাবে হতাশা প্রকাশ করেন মেঘনা বীচ ভিউ রিসোর্টের ম্যানেজার সমির। তিনি বলেন, 'আমাদের ব্যবসা মূলত ফেব্রুয়ারিতেই হয়। জানুয়ারিতে শীতে আসতে চায় না অনেকে।
'অনেককে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা জাহাজে যেন চলে আসেন। কারণ জাহাজ টেকনাফ থেকে বন্ধ হয়েছে, কক্সবাজারে চালু আছে।'
তবে টেকনাফের জাহাজ ছাড়া সেন্টমার্টিন অচল দাবি করে তিনি বলেন, 'কক্সবাজার থেকে ৬-৭ ঘণ্টার ভ্রমণ কেউ করতে চায় না। তাদের সেবায় আমাদের পর্যটকরা খুশি হয় না। আমাদের ব্যবসায় বড় ধস নামছে বলা যায়।'
দেশের মূল ভূখণ্ডে থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই দ্বীপে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম চলে। সাগর শান্ত থাকার কারণে এ সময় পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধের ফলে পর্যটকরা এখন সেন্টমার্টিন এড়িয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বেশ কয়েকজন সেন্টমার্টিনমুখী পর্যটক মাঝপথে কক্সবাজার নেমে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জাহাজ ও রিসোর্ট বুকিং বাতিল করেছেন তারা।
বে ক্রুজ জাহাজের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, 'আমাদের জাহাজ আপাতত ৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে। নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অন্যত্র সরে থাকবে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করার নেই আমাদের।'
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, 'এটা সত্য আমাদের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। এই আয়ের ওপরেই বাকি ৭ মাস আমাদের স্থানীয় লোকজন চলে। কিন্তু এবার সবদিক থেকেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত।
'আদৌ মার্চের আগে জাহাজ চালু হবে কি না জানি না। আর শোনা যাচ্ছে কক্সবাজারের জাহাজ চলবে। কিন্তু সেটা সেন্টমার্টিনের জন্য পর্যাপ্ত না। টেকনাফের জাহাজের ওপরেই সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসা টিকে থাকে।'
দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার চা ও ডাব ব্যবসায়ী সালেহ মিয়া বলেন, 'এখন জাহাজ বন্ধ হলেও মার্চের আগে আবার শুরু হতে পারে। এতদিন যেভাবে ছিল, সেন্টমার্টিন সেভাবেই থাকবে ১০ তারিখের পর থেকে। আর আয়-রোজগারের বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি।'