ফরিদপুরে লালমী-বাঙ্গির ভালো মানের ফলন না হওয়ায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা জুড়ে চাষ হয় বাঙ্গির আদলে দেখতে লালমী। রোজার মাসে সারাদেশে লালমীর ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। এখানকার কৃষকরা রোজার মাসকে সামনে রেখেই মূলত লালমীর চাষ করেন।
রমজান মাস জূড়ে রোজাদারের প্রতিদিনের ইফতারিতে বাহারি রসালো ফলের দেখা মিলে। কারণ এ গরমে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীর একদিকে যেমন দুর্বল হয়ে যায় অন্যদিকে পানিশূন্যতাও দেখা দেয়। তাই শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে পুষ্টিগুণে অনন্য এবং সুগন্ধযুক্ত অসাধারণ স্বাদের লালমী-বাঙ্গি ইফতারিতে রোজাদারের বিশেষ পছন্দের তালিকায় থাকে।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষানচর, কৃষ্ণপুর, চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ব্যাপক ভাবে লালমী-বাঙ্গির আবাদ করা হয়েছে। রমজান মাসকে সামনে রেখে রোজা শুরুর ৪৫ থেকে ৫০ দিন আগে লালমী-বাঙ্গির আবাদ করে থাকেন এ উপজেলার কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, লালমী-বাঙ্গি চাষ বেশ লাভজনক। প্রতি বিঘা জমি আবাদ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ভালো ফলন হলে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব।
রোজা শুরুর সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই মাসব্যাপী স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে এখানকার লালমী-বাঙ্গি। রমজান মাস আসলেই সদরপুরের লালমী চাষীরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে তাদের উৎপাদিত লালমী-বাঙ্গি বিক্রি করে থাকলেও এবার রোজার শুরুতে কোথাও লালমী-বাঙ্গির দেখা মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর চাষীরা সময় মতো বীজ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলেও বৃষ্টির কারণে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে চাষীদের পুনরায় আবার আবাদ করতে হয়েছে। এজন্য রমজানের শুরুতে ফলন না পাওয়া ও দেরিতে মাঝ রোজার সময় ফলন হওয়ার কারণে সঠিক দাম পাচ্ছে না চাষীরা। তাছাড়া আশানুরূপ ভালো ফলন হয়নি বলে কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
উপজেলার মটুকচর এলাকার কৃষক গনি ফকির জানান, "এইবার দানা (বীজ) লাগানোর পরে বৃষ্টি হয়ে লালমীর বীজ পচে গেছে। পুনরায় আবার আবাদ করছি। উৎপাদন খরচ হয়েছে দ্বিগুণ। ফলন ভালো হয়নি। আবার সময় মতো ফলন না হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছি না। এ বছর লালমী আবাদের খরচ উঠাতে পারবো কিনা তাই নিয়ে চিন্তায় আছি।"
আরেক কৃষক শৌলডুবি গ্রামের মকিব মাতুব্বর জানান, "রোজার প্রথম দিকে লালমীর চাহিদা বেশী থাকে, দামও ভালো পাওয়া যায়। ১০০ পিছ বাঙ্গি সাড়ে ৫ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এ বছর আবহাওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়নি। দাম পাচ্ছি আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।"
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটল রায় জানিয়েছেন, "এবার উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে লালমী-বাঙ্গির আবাদ করা হয়েছে। তবে অসময়ের বৃষ্টি কারণে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে অনেকটা। সময়মতো ফলন না পাওয়া ও বাজারজাত করতে না পারায় ভালো দাম পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে।"