ইলিশের আকার ছোট, দাম বেশি, হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতা
রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রীতি এখন বেশ প্রচলিত। তবে এবার বাজারে ইলিশের দাম চড়া। এমনকি ছোট আকারের ইলিশও অনেক ক্রেতার সাধ্যের বাইরে।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) বরিশালের পোর্ট রোড, নতুন বাজার, বাংলা বাজার, রূপাতলী বাজার, নথুল্লাবাদ, কাশিপুর ও তালতলী মাছবাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
পহেলা বৈশাখ ঘিরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমনে ৩০–৩৫ হাজার টাকা দাম বেড়েছে ইলিশের, যা দেড় থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি। গত ১০ দিনের ব্যবধানে এক মন ইলিশের দাম লাখ টাকা ছুঁয়েছে।
নগরীর বাইরে উপজেলা শহরগুলোতেও ইলিশের দাম ক্রেতাদের হতাশ করছে। বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ ও বানারীপাড়ার বাজারগুলো এবং বিভাগের বড় পাইকারি মাছের আড়ৎ পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস অবতরণ কেন্দ্র ও বরগুনার পাথরঘাটা মৎস অবতরণ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে একই পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
এসব বাজারে এবার এক কেজি ওজনের ইলিশ বেশ বিরল। চাহিদা থাকলেও অভয়াশ্রমে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মিলছে না সুস্বাদু এ মাছটি। ৭০০–৮০০ গ্রামের মাছই এবারের বৈশাখের বড় ইলিশ বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
এছাড়া বিক্রি হচ্ছে জাটকাও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার চৈত্র মাসে ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ আসেনি। ফলে অল্প পরিমাণ ইলিশের বাড়তি চাহিদার কারণে দাম হু-হু করে বেড়ে গেছে। ক্রেতারা অবশ্য বাড়তি দামের জন্য বাজার পর্যবেক্ষণের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন।
দাম বেশি, আকারে ছোট
৭০০–৮০০ গ্রামের ইলিশ ১,১৫০ থেকে ১,৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন নতুন বাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন। তিনি জানান, আধাকেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার থেকে ১,১০০ টাকায়। আর জাটকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায়।
পোর্ট রোড মৎস অবতরণ কেন্দ্রের আরেক ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমনে ৩০–৩৫ হাজার টাকা দাম বেড়েছে ইলিশের।
'প্রতি মন ইলিশের দাম দেড় থেকে দ্বিগুন বেড়েছে। আগে যে মাছ ৬০–৬৫ হাজার টাকা মন ছিল, তা ১০ দিনের ব্যবধানে এক লাখ টাকা হয়েছে,' বলেন তিনি।
বাকেরগঞ্জের বাজারে মাছ কিনতে আসা পবিত্র হালদার বলেন, 'দাম বেশি হলেও বাজারে কিনতে এসে হতাশ হয়েছি। ইলিশের নামে যা বিক্রি হচ্ছে তা জাটকা।'
পোর্ট রোডের ব্যবসায়ী রুবেল হাওলাদার বলেন, চৈত্রের শেষ সময়ে মোকামে কোনো ইলিশের ট্রলার আসছে না। যা আসছে তা জাটকা। ফলে বাজারে এখন ইলিশের দাম চড়া।
'আমরা জেলেদের কাছ থেকে কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। বেশি দামে কিনতে হয় বলে বেশি দামেই বিক্রি করি। তবে ইলিশ এলে দাম এত বেশি হতো না,' বলেন তিনি।
ইলিশ সংকট
বাবুগঞ্জ মীরগঞ্জের জেলে ইয়াকুব আলী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশ কম পাওয়া গেছে। 'আগে বৈশাখ শুরুর আগেই চৈত্র মাসে ঝড়-বৃষ্টি হতো। তাতে উজান ঠেলে ইলিশের ঝাঁক নদীতে উঠে আসত। কিন্তু এবার ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশ আসেনি।'
জালে ওঠা ইলিশের মধ্যে বেশিরভাগ জাটকা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সবখানে আমরা জালও ফেলতে পারছি না।'
ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ বাজারে আসছে না। ফলে অনেক চাহিদা থাকলেও মাছ নিয়ে ট্রলার আসছে না।
পটুয়াখালী জেলার মহীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মনির হোসেন বলেন, 'মহিপুর মৎস বন্দরে নিষেধাজ্ঞা ছাড়া কয়েক হাজার মন ইলিশ আসে। এখন দেড়শ থেকে দুইশ মণ আসছে।'
নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ ব্যবসায়ী।
বরিশাল নগরীর কাশিপুর বাজারে ইলিশ মাছ খুঁজছিলেন কলেজ শিক্ষক জোবায়ের হোসেন। তিনি বলেন, 'আসলে ইলিশের বিকল্প কিছু নেই দেখে অন্য কিছুর চেষ্টাও করা যাচ্ছে না। কিছু জাটকা কিনেছি। তাতেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাব।'
দাম কমাতে নেই উদ্যোগ
ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে স্বীকার করে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, 'বাজারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তবে তা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।'
ক্রেতা জোবায়ের হোসেন বলেন, 'এক কেজি সাইজের ইলিশ আড়াই হাজার টাকা দামে বিক্রি হতে দেখেছি। আর দেড় কেজি ওজনের ইলিশ তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ সময় বাজার মনিটরিং না থাকায় এমন অস্বাভাবিক দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এ ক্রেতা।
বিমল চন্দ্র দাস বলেন, 'প্রতি কেজি ইলিশের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন মোকামে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকায়।'
'নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা প্রভাব থাকলেও আরও অনেক কারণে দাম বাড়তে পারে। তবে দাম কেন বাড়ছে তা বাজার ব্যবস্থানা কর্তৃপক্ষ সঠিক বলতে পারবেন,' বলেন এ মৎস্য কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী জেলার ইলিশ অভয়াশ্রমে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।