পানিশূন্য কুষ্টিয়ার গড়াই নদী, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাহাকার
কুষ্টিয়ার মাঝে প্রবাহিত প্রমত্ত গড়াই নদী আজ মৃতপ্রায়। বসন্ত শেষ হতে না হতেই পানি প্রায় শুকিয়ে গেছে এ নদীতে। প্রমত্তা গড়াই এখন পরিণত হয়েছে ছোট খালে, সেইসঙ্গে নেমে গেছে পানির স্তর। এর প্রভাবে কুষ্টিয়া পৌর এলাকাসহ আশপাশের প্রায় লক্ষাধিক নলকূপে উঠছে না পানি।
পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। পানির জন্য চলছে হাহাকার।
কুষ্টিয়া শহর গড়ে উঠেছে গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে। গড়াইয়ে পানি না থাকায় এর শাখা কালি নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার তথ্য অনুসারে, পৌর এলাকার ২১টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং সংখ্যা ৩৭ হাজার, যার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নিজস্ব নলকূপ আছে। এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫ হাজারের বেশি নলকূপ।
পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারনে এসব এলাকার প্রায় সব নলকূপই অকেজো হয়ে গেছে। যেগুলো কাজ করছে সেগুলোতেও পানি উঠছে অতি সামান্য। ১ বালতি পানি তুলতে আধাঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে।
শুধু পৌর এলাকাই নয়, শহর সংলগ্ন হরিপুর ইউনিয়ন, কয়া, শিলাইদহ ইউনিয়ন সহ আরো অনেক এলাকায় চলছে পানির জন্য হাহাকার।
তবে গড়াই নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাস কর মানুষের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। পানির সংকট এতটাই প্রকট যে খাবার পানির পাশাপাশি গোসল এবং গবাদিপশুর জন্য পানির ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পানির জন্য নদীর চরের প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হচ্ছে মানুষকে। এমন সংকটে আগে কখনও পড়েননি তারা।
কুমারখালী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাহের মিয়া বলেন, পানির সংকট এতটাই প্রকট যে খাবার পানির ব্যবস্থা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। গোসল ও গবাদিপশুর জন্য পানি সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কুমারখালী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রেহেনা পারভিন বলেন, 'পানির জন্য নদীর চরে প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার হেঁটে যেতে হচ্ছে।'
যদুবয়রা গ্রামের গৃহিনী সালমা বেগম বলেন, 'কল থাকলেও তাতে পানি নেই। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই পানির সংকট চলছে। যার কলে পানি উঠছে, সেখানে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হচ্ছে।'
গড়াই নদীর ওপর অবস্থিত সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতু ও গড়াই ব্রিজের নিচে ড্রেজিং করার ফলে কিছুটা পানি প্রবাহ থাকলেও অধিকাংশ পিলার ধূধূ বালির ওপর রয়েছে। সাধারণ মানুষ এই গড়াই নদীর অনেক স্থান দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, নদীগুলোর নাব্যতা না থাকার পাশাপাশি পানির স্তর বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ ফিট নেমে যাওয়ায় হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না।
পানির স্তর এভাবে কমে যাওয়ার জন্য যত্রতত্র গভীর নলকূপ ব্যবহারকে দায়ী করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারা বলছে, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানিও শুকিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে যেসব নলকূপের লেয়ার কম দেওয়া, সেসব নলকূপে পানি না ওঠারই কথা। সেক্ষেত্রে নতুন নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক আরো গভীরে লেয়ার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পানি সংকটে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ। তিনি জানান, তার নির্বাচনী এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পিডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।