দাবদাহে পোল্ট্রি শিল্পে ক্ষতি ১৬ হাজার কোটি টাকা, বাড়তে পারে ডিম ও মুরগির দাম: বিসিএসএমএ
বাংলাদেশ সিমেন্ট শীট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএমএ) জানিয়েছে, দাবদাহে ৩০ দিনে পুরো পোল্ট্রি শিল্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা। তাই আগামী মাস থেকে ডিম ও মুরগির দাম বাড়তে পারে।
শনিবার (৪ মে) বিকাল ৪টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি এ কথা জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সভাপতি ডা. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, 'দাবদাহের কারণে ডিমে দৈনিক ক্ষতি হয়েছে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত ৩০ দিনে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। লেয়ার ফার্মে দৈনিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৮৮ কোটি টাকা এবং গত ৩০ দিনে প্রায় ৮ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্রয়লার ফার্মে দৈনিক ২৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এবং এক মাসে প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্পকে।'
তিনি আরো বলেন, 'এ ক্ষতির কারণে উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। যেটি এখনই সরাসরি দৃশ্যমান হচ্ছে না। তবে আগামী মাস থেকে এর প্রভাব বাজারে পড়তে পারে। তখন মুরগি ও ডিমের দাম বাড়তে পারে।'
মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, 'গরমে লেয়ার বাচ্চা উৎপাদন কমেছে ১০ শতাংশ ও মৃত্যু হয়েছে ৫ থেকে ৮ শতাংশ। একইভাবে ব্রয়লার বাচ্চা দাবদাহে মারা যাচ্ছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে। এই দাবদাহে ক্ষতি প্রতিরোধে অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারের শেডে সিমেন্ট শিট ব্যবহার প্রতিরোধমূলক ভূমিকা রাখবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও সুপারিশ করেছে যে দাবদাহ নিয়ন্ত্রণে সিমেন্ট শিট ব্যবহার কার্যকরী।'
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন বলেন, 'পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিদিন দাবদাহে দেশে বিপুল সংখ্যক মুরগী স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। তাছাড়া ডিম ও মাংস উৎপাদন প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে।'
সংবাদ সম্মেলনে শেরে-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল অ্যান্ড ভেটেরিনারী মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বেগ বলেন, 'দাবদাহে এ শিল্পের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা খামারিদের পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে খামারিদের সরকারি সহায়তা করতে হবে।'
ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, 'সম্প্রতি দাবদাহে প্রায় ৯ থেকে ১০ শতাংশ ব্রয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে। এজন্য আমরা সরকারের সহায়তা কামনা করছি।'
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাথুরাম সরকার, বাংলাদেশ খামার রক্ষা জাতীয় কমিটির মহাসচিব এ কে ফজলুল হক, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন. প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রফিকুল হাসান প্রমুখ।
এ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ সমীক্ষায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনসহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা জড়িত ছিল।