আমদানি কমে যাওয়ায় ঈদের আগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশি পেঁয়াজের দাম
আমদানি খরচ বৃদ্ধির কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা কমে যাওয়া এবং ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে স্থানীয় বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় পেঁয়াজের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।
শুক্রবার (৩১ মে) রাজধানীর শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও মগবাজারের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে। এরসঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশি পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিকেজি দেশীয় পেঁয়াজ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৪ টাকায়। অন্যদিকে, আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ টাকায়। যদিও বাজারে খুব বেশি দেখা মেলেনি ভারতীয় পেঁয়াজের।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া টিবিএসকে বলেন, "ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে খুবই কম। প্রতিদিন দুই-এক ট্রাক ঢোকা। তবে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ আসছে কম। এর সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দাম অল্প কিছু বেড়েছে।"
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য এবং ৪০ শতাংশ শুল্কের কারণে দেশে পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না।
আমদানিকারকরা জানান, ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রতিটন ৫৫০ ডলারে আমদানি করলে রপ্তানি শুল্ক, কাস্টমস শুল্ক, পরিবহন ও শ্রমিক খরচসহ প্রতিকেজি পেঁযাজের দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এরমধ্যে রপ্তানির জন্য ভারতে কেজিপ্রতিতে শুল্কই পরিশোধ করতে হচ্ছে ২৫ টাকা। এ কারণে আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর মে মাসে ব্যবসায়ীরা ২ লাখ ৮৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন। এরমধ্যে আমদানি হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৯৬২ টন।
অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। পরবর্তীতে, গত ৪ মে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ টিবিএসকে বলেন, "ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিতে ভারতের শুল্কের পাশাপাশি বাংলাদেশ অংশেও শুল্ক রয়েছে। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম কম থাকলেও আমাদের আমদানি খরচ অনেক বেশি পড়ছে।"
গত বছরের ৫ জুন থেকে এ পর্যন্ত ২৬ লাখ ২ হাজার ৮৭৪ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ২৪ হাজার ২৬৩ টন।
এদিকে, দেশে পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে দুই থেকে তিন মাস আগে। এ সময়ে বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার কথা থাকলেও দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খরচ প্রভাব ফেলছে দেশীয় পেঁয়াজের বাজারে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।
অন্যান্য পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী
এদিকে, পেঁয়াজ ছাড়াও বেড়েছে আলু, ডিম, কাঁচামরিচ এবং বিভিন্ন মসলা ও সবজির দাম।
প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা দরে। কারওয়ানবাজারে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন বাদামি ডিম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। এছাড়া, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।
এদিকে, মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৬০ টাকায়।
এছাড়া, কাঁচামরিচের দাম এখনও কমেনি। মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সরবরাহ কম থাকায় সবজির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতিকেজি বেগুন ও পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়; বরবটি ও কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এবং পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শসহ আরও কয়েকটি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
এদিকে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গত একমাস ধরেই বাড়ছে বিভিন্ন মসলার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন ২০০ থেকে ২৩০ টাকা এবং চীনা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা।
মানভেদে আমদানি হওয়া আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা।
এছাড়া, জিরা কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে ৭৫০-৮৫০ টাকা, লবঙ্গ ১০০ টাকা বেড়ে ১৫০০-১৮০০ টাকা, এলাচ ২০০ টাকা বেড়ে ৩,২০০-৪,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।