চালু হলো বেনাপোল–মোংলা পথে দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল
দীর্ঘ-প্রতীক্ষার পর বেনাপোল–মোংলা রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ শনিবার (১ জুন) ট্রেনটি বেনাপোল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে মোংলা বন্দরে পৌঁছায়।
এদিন মোংলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার। এ সময় মোংলা রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার এইচএম মনির আহমেদসহ রেল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে প্রথমদিনে মোংলা বন্দরে পৌঁছাতে দেরি করে মোংলা কমিউটার নামক ট্রেনটি। এরপর মোংলা থেকেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুঘণ্টা পরে, বিকেল সোয়া তিনটায় বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা করে মোংলা কমিউটার।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, '১ জুন সকাল সোয়া ৯টায় বেনাপোল থেকে মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে ট্রেনটি মোংলায় পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। এরপর মোংলা থেকে ট্রেনটি দুপুর ১টায় ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়।'
স্টেশন মাস্টার এইচএম মনির আহমেদ বলেন, আপাতত প্রতিদিন একটি ট্রেন বেনাপোল থেকে মোংলায় আসবে এবং মোংলা থেকে একটি ট্রেন বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে স্টেশন মাস্টার বলেন, 'খুলনায় আমাদের অন্য একটি ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়েছিল। যার কারণে লাইন বন্ধ রাখতে হয়েছে। এজন্য কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছে ট্রেনটি।'
স্টেশনে ট্রেন পৌঁছালে স্থানীয় জনগণ ও যাত্রীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। প্রথমদিন হওয়ায় ট্রেন পৌঁছাতে বিলম্ব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ করেননি তারা কেউ।
খুলনার ফুলতলা থেকে বাগেরহাটের মোংলা স্টেশনে আসা যাত্রী শিউলি বাশার বলেন, 'মোংলা এসে ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে ইতিহাসের সাক্ষী হলাম।'
যশোর রেল স্টেশন থেকে মোংলায় আসা ট্রেনযাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, 'এ ট্রেন চালু হওয়ার মাধ্যমে মোংলা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ সহজ হয়ে গেল। আগেও যশোর থেকে মোংলায় এসেছি, তবে বাসে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হতো।'
খুলনা থেকে মোংলায় ট্রেন চালু হওয়ার মাধ্যমে এ অঞ্চলের উন্নয়নের দুয়ার খুলেছে বলে মনে করেন খুলনার ফুলতলার যাত্রী ৬৯ বছর বয়সি সুনীল কুমার মিত্র। 'অনেক মানুষ মোংলায় চাকরি করে। তারা এ ট্রেনের মাধ্যমে খুলনা থেকে যাতায়াতের সুফল ভোগ করবেন। এছাড়া ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই বন্দর থেকে মালামাল পরিবহন করতে পারবেন,' বলেন তিনি।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খুলনার বেনাপোল থেকে বাগেরহাটের মোংলা পর্যন্ত নতুন এ রেললাইনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের প্রায় সাতমাস পর এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলো।
বন্দর প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছেন মোংলার ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিরা।
এ ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হলো মন্তব্য করে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার বলেন, 'রেল চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।'
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা–মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১০ সালে। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
এরপর ২০১৫ ও ২০২১ সালে দুবার প্রকল্প সংশোধন করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ধরা হয়।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্বোধন করেন। ১৩৮.৬৪ কিলোমিটার দূরত্বের এ পথে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন ট্রেন চলবে।