পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যুতে নিরাপত্তা বাহিনীর গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সম্প্রতি রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিনি দূতাবাসের সামনে এক পুলিশ কনস্টেবলকে গুলি করার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ (১০ জুন) নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, 'এ ঘটনায় অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সবার মনে। আমরাও চিন্তিত। ঠিক কী কারণে এমনটা ঘটল! এটা কি পূর্বপরিকল্পিত নাকি পারিবারিক সমস্যার কারণে, তা তদন্তের পরই নিশ্চিত করে বলা যাবে।'
এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) কে এইচ মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীমের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এলিন চৌধুরী ও গোয়েন্দা ও বিশ্লেষণ বিভাগের (আইএডি) সহকারী কমিশনার আশফাক আহমেদকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল কাওসার আলীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (৯ জুন) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহাম্মদ এই আদেশ দেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৮ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। নিহত পুলিশ সদস্য ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া এই ঘটনায় সাজ্জাদ হোসেন নামে জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালক আহত হন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের ইনসিডেন্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, কনস্টেবল কাওসার আহমেদ সাব মেশিনগান দিয়ে দুটি ম্যাগাজিনের ৩৮ রাউন্ড গুলি চালান। কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের দেহ তাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
রোববার (৯ জুন) গুলশান থানায় মামলা করেছেন নিহত মনিরুল হকের ভাই মো. মাহাবুবুল হক। এতে কনস্টেবল কাওসার আলীকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাওসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল। প্রতিটা ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে।'
তিনি বলেন, 'এ ঘটনায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ব্রাজিলীয় কোম্পানি টরাস আর্মসের তৈরি। প্রায় ১২ বছর আগে টরাস এসএমটি পুলিশের হাতে আসে। সাধারণ দায়িত্বে এ ধরনের অস্ত্র পুলিশের হাতে দেখা না গেলেও কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশকে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও দেওয়া হয়।'
ওসি জানান, 'নিহত মনিরুলের কাছে চায়নিজ রাইফেল ছিল। সেটা ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ, পাল্টা গুলি করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি বা সুযোগই পাননি।'
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার পর পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ও কাওসার আলীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই কনস্টেবল মনিরুলকে এলোপাতাড়ি গুলি করেন কাউসার। বুকে গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল।