গাজীপুরে মতিউরের ৬০ বিঘা জমিতে নির্মিত রিসোর্ট ছাড়াও রয়েছে বিপুল ভূসম্পত্তি
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/06/26/apon_bhuban_15.jpeg)
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের নামে গাজীপুরে ৬০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত একটি রিসোর্ট রয়েছে। আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শ্যুটিং স্পট নামক রিসোর্টটি গাজীপুরের পুবাইল থানার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকায় অবস্থিত।
এ রিসোর্ট ছাড়াও মতিউর, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে আরও জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। পুবাইলের খিলগাঁও মৌজায় মতিউরের পরিবারের সদস্যদের নাম বিপুল পরিমাণ জমি নামজারী ও জমাভাগ করা হয়েছে।
মতিউর রহমান বছরের পর বছর ধরে রাজস্ব কার্যালয়ে তার ঊর্ধ্বতন পদের অপব্যবহার করে আর্থিক ও রিয়েল এস্টেট সম্পদসহ কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আগে 'আপন ভুবন'-এ শ্যুটিং করা হলেও খিলগাঁও রেলগেইটের কাছে অবস্থিত রিসোর্টটিতে বর্তমানে একশত টাকা ফি দিয়ে যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রিসোর্টটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ খিলগাঁও এলাকায় ৩৫ বিঘা জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীকালে মতিউর আরও কিছু জমি কিনে ও স্থানীয়দের কাছ থেকে বাৎসরিক হিসেবে জমি ভাড়া নিয়ে মোট ৬০ বিঘা জমির ওপর রিসোর্টটি নির্মাণ করেন।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/06/26/apon_bhuban_16.jpeg)
বিলাসবহুল প্রায় ১৮টি কটেজ, বিভিন্ন রাইডসহ অসখ্য স্থাপনা রয়েছে রিসোর্টটিতে। এটি দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত আছেন একজন তত্ত্বাবধায়কসহ ১২ জন কর্মচারী।
স্থানীয় দোকানদার শরিফ হোসেন বলেন, 'আমরা সবাই জানি আপন ভুবন কানিজ ম্যাডামের। এখন জানতে পারছি, এ ম্যাডাম মতিউরের বউ। আগে শ্যুটিং হতো, গত একবছর ধরে ১০০ টাকা করে টিকেট করেছে।'
রিসোর্টটির টিকেটম্যান মেহেদী বলেন, 'এখানে কয়েকজনের জমি আছে। মতিউর স্যারেরও আছে, আরও অনেকেরই আছে। সবার নাম আমি জানি না, অল্পদিন ধরে এখানে কাজ করি।'
আপন ভুবনের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাজিব মিয়াকে রিসোর্টে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এখানে প্রায় ৬০ বিঘার মতো জমি আছে। তাদের [রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ] নিজেদের জমি আছে ৩৫ বিঘা, বাকি জমি স্থানীয়দের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া।
মতিউর রহমানের কথা জানতে চাইলে তিনি ফোন রেখে দেন।
রিসোর্টের বাইরেও বিপুল ভূসম্পত্তি
গাজীপুর জেলা প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শ্যুটিং স্পটের নামে পাঁচ একর ৭৭৭ শতাংশ জমি নামজারী জমাভাগ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগসূত্র অনুযায়ী, খিলগাঁও মৌজায় ৩৬৫৬ নং জোত নাম্বারে মতিউরের নামে ২৭ শতাংশ এবং ৪২৪৯ নং জোতে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ জমি নামজারী করা হয়েছে।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/06/26/apon_bhuban_7.jpeg)
একই মৌজায় মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ৩৪৫০ নং জোতে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি খারিজ করা হয়েছে।
এছাড়া ওই মৌজায় মতিউরের প্রথম পক্ষের সন্তান আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ৩৬৪৮ নং জোতে ১৯ শতাংশ, ৪৪১৫ জোতে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ, ৪৪১৬ নং জোতে ৫৫ শতাংশ, ৩৯৫০ জোতে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি নামজারী জমাভাগ করা হয়েছে।
খিলগাঁও মৌজায় মতিউরের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার নামে ৩৯২৫ নং জোতে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩৬৪৫ নং জোতে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি খারিজ করা হয়েছে।
এছাড়াও মতিউর, তার স্ত্রী ও মেয়ের যৌথ নামে ৩৫৫৭ নং জোতে ৪৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং লায়লা কানিজ ও সন্তান তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ৩৬৫২ নং জোতে ৪৫ শতাংশ জমি নামজারী জমাভাগ করা রয়েছে।
এসব জমি তাদের দখলে রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
এসবের পাশাপাশি গ্লোবাল সুজের নামে খিলগাঁও মৌজায় ২১, ৬৬–৬৯, ৭১–৭২, ৭৪–৭৫, ৯১–৯২, ১১৪ ও ১২০–১২৪ নং জোতে শিল্প খারিজ করে জমাভাগ করা ৬৫ শতাংশ জমি রয়েছে।
এসব ছাড়াও মতিউর রহামনের তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে-বেনামে গাজীপুরে আরও জমির সন্ধান পাওয়া গেছে।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/06/26/apon_bhuban_4.jpeg)
এসবের মধ্যে রয়েছে গাজীপুরে পাঁচ কাঠা, পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ জমি।
মতিউরের দ্বিতীয়পক্ষের সন্তান ইফাত ১৫ লাখ টাকা খরচ করে গত ঈদুল আজহার সময় একটি ছাগল কিনেছেন — এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান। ৪ জুন মতিউরের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরুর পর মতিউরকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
২৪ জুন ঢাকার একটি আদালত মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী এবং তাদের সন্তানের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একইদিন মতিউরকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে অপসারণের জন্য সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৫ জুন) মতিউর, তার দুই স্ত্রী ও সন্তান এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের মধ্যে জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ওইদিন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের বেনিফিশিয়ারি ওনার অ্যাকাউন্ট (বিও হিসাব) জব্দ করতেও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।