কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা
২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আজ মঙ্গলবার গণপদযাত্রা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হন। পরে সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিভিন্ন আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে নীলক্ষেত যায়। সেখান থেকে ঢাকা কলেজ ও নিউ এলিফ্যান্ট রোড হয়ে শাহবাগে পৌঁছে সড়ক অবরোধ করে। বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে অবরোধ শুরু হয়ে এখনও চলমান আছে।
এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আব্দুল কাদির বলেন, "৪ দফা দাবিতে আমাদের এই আন্দোলন আগামী ৪ জুলাই হাইকোর্টের শুনানি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ছাত্রসমাজ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি সকল কিছু উপেক্ষা করে নায্য আন্দোলন জারি রাখবে।"
ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আসিফ মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গণপদযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বিভিন্ন আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে নীলক্ষেত যাবে। সেখান থেকে ঢাকা কলেজ হয়ে নিউ এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে শাহবাগে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।"
এর আগে সোমবার (১ জুলাই), দুপুর ১২টায় একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি টিএসসির সামনে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বেলা ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'কোটা না মেধা', আপোস নয় সংগ্রাম', 'আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে', 'কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক'- এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ছাড়া সব ধরনের অনায্য কোটা বাতিল করতে হবে। আগামী ৪ জুলাই হাইকোর্টের শুনানি পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
দাবিগুলোর মধ্যে আছে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)।
এছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রিসভা। পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখে সরকার।