১১৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ: চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
উচ্চ আদালতের সাথে পে-অর্ডার প্রতারণা ও ১১৫ কোটি টাকা ঋণ শোধ না করায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন আহমদ এবং তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পদ্মা ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় শুনানি শেষে আজ (১০ জুলাই) বুধবার চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এই আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, 'পদ্মা ব্যাংকের খেলাপির মামলায় হাইকোর্টের সঙ্গে পে-অর্ডার প্রতারণা ও ১১৫ পরিশোধ না করায় চন্দনাইশ উপজেলার চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন ও তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।'
তিনি বলেন, 'একই সঙ্গে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেন আদালত।;
আদালতের তথ্যমতে, 'গত ৩০ এপ্রিল পদ্মা ব্যাংকের ৮৯ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির মামলায় জসীম উদ্দিন ও তার স্ত্রী তানজিনাকে পাঁচ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশ দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।'
তবে বিবাদি জসিম উদ্দিন হাইকোর্ট ডিডিশনে ১৭ টি পে-অর্ডার মূলে ১৪ কোটি টাকা পরিশোধের হলফনামা দিয়ে অর্থঋণ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন।
গত ১৫ মে পে-অর্ডার মূলে উক্ত টাকা পরিশোধের কথা বলা হলেও এই পর্য়ন্ত ব্যাংকে কোনো পে-অর্ডার দাখিল করেননি বিবাদি। ফলে হাইকোর্ট ডিভিশনের উক্ত স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান পাওনাদার ব্যাংক।
এর প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ জসিম উদ্দিনকে ১৫ মে তারিখের আদেশে উল্লেখিত পে-অর্ডার সমূহ দাখিল করার জন্য তিন দফা সময় বৃদ্ধি করেন। কিন্তু বিবাদি পে-অর্ডারগুলো ব্যাংকে জমা না দেওয়ায় আপিল বিভাগ গত ৪ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের পূর্বের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, জসীম উদ্দিন আহমদ একজন ইচ্ছেকৃত ঋণ খেলাপি। আর্থিক সক্ষমতা থাকা সত্বেও হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক ডিক্রিকৃত টাকা পরিশোধ করেন নি। যা উচ্চ আদালতের সাথে প্রতারণা। এই খেলাপির কাছে ব্যাংকের পাওনা ১১৫ কোটি টাকার কম নয়। ব্যাংক থেকে নেয়া এই ঋণ ব্যবসা বহির্ভূত খাতে খরচ করেছেন। বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ি ব্যবহার করেন। ঋণের টাকা শোধ না করে প্রাসাদোপম বাড়ি করেছেন।
এই বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন আহমদ টিবিএস কে বলেন, 'সোলানামা মূলে ব্যাংকে ১৫ কোটি টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও তার চেয়ে এক কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছি ব্যাংকে।'
তবে যেই পে অর্ডার মূলে উচ্চ আদালত থেকে মামলার কার্য়ক্রম স্থগিত করেছেন সেই পে-অর্ডার জমা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তার কোনো উত্তর দেননি তিনি।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদ্মা ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'এই খেলাপি এ পর্যন্ত ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন তা ঠিক। কিন্তু যেই ১৭টি পে-অর্ডার দেখিয়ে অর্থঋণ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনেছে,ন তাতে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ মোট ১৭টি পে অর্ডারের মধ্যে ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত (৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা) যেই পে-অর্ডারগুলো নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তা আগেই ব্যাংকে জমা দেয়া পে-অর্ডার। ৮ থেকে ১৭ নম্বর পর্যন্ত বাকি যেই ১০ টি পে-অর্ডার (মোট ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা) উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্যাংক এখনো পর্যন্ত পায়নি।
পদ্মা ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ট্রেডিং ব্যবসার জন্য ৬০ কোটি টাকা ঋণ নেন জেসিকা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার জসীম। কিন্তু সেই ঋণ শোধ হয়নি প্রায় আট বছরেও। বর্তমানে সুদাসলে প্রায় ৯৪ কোটি টাকা বকেয়া দাঁড়িয়েছে। ঋণ শোধ না করায় ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের বিরুদ্ধে খেলাপি মামলা (মামলা নম্বর-১০৩/২০২০) দায়ের করে পদ্মা ব্যাংক। পরে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ঋণ পুনর্গঠন করেও তা পরিশোধ না করায় জসিমকে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে বলে মামলার রায় দেন অর্থঋণ আদালত।
পদ্মা ব্যাংক ছাড়া জসিম উদ্দিনের কাছে সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখা থেকে নেওয়া ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।
জসিম উদ্দীন আহমেদ জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং কক্সবাজারের বিলাসবহুল হোটেল রামাদা, কক্সবাজারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চট্টগ্রামে আছে অন্যান্য বাণিজ্যিক সম্পত্তিও রয়েছে তার।
উল্লেখ্য, ঋণ খেলাপি হওয়ার পরও জসীম উদ্দিন উচ্চ আদালত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) প্রদর্শন করার স্থগিতাদেশ এনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গত ২৯ মে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।