রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবারও (১১ জুলাই) তাদের অবরোধ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। এ দিন পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সড়কে বের হয়েছেন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর প্রায় ২০ জন আহত হন। এরপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এছাড়া এ দিন পুলিশের বাধা ও অনুরোধ উপেক্ষা করে ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে জড়ো হতে শুরু করেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিনিধি জানান, পুলিশের সঙ্গে হামলার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ ও আশপাশের বিভিন্ন মেস থেকে শিক্ষার্থীরা এসে বিক্ষোভে যুক্ত হন। এরপর তারা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত ইতোমধ্যে রায় দেওয়ার পরও কেউ রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, 'বৈরী আবহাওয়া কিংবা পুলিশ ও ছাত্রলীগের সতর্ক অবস্থান সত্ত্বেও আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি অন্যদিনের মতো পালিত হবে। আমরা সত্যের পক্ষে আছি, আমরা অনিরাপদ বোধ করছি না।'
অন্যদিকে পুলিশের অনুরোধ ও বাধা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সড়কে মুখোমুখি অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও।
বিকেল সাড়ে ৫টা
শেকৃবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আগারগাঁও সড়ক অবরোধ
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার কথা জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রবেশপথের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷
এর কিছুক্ষণ পর দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আগারগাঁও সড়ক দখলে নেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগারগাঁও সড়কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
বিকেল ৫টা
শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা
পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে দিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান গ্রহণ করেছেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে আগত কয়েক হাজার আন্দোলনকারীর একটি বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগে পৌঁছে।
আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অতিক্রম করে একবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত গেলেও পরে আবার সেখান থেকে শাহবাগ ফিরে আসেন।
রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আকতারুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে এনেছি।'
'আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে ফিরে যাক,' বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের এ কর্মকর্তা।
বিকেল ৪টা
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে জাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
পুলিশের অনুরোধ ও বাধা উপেক্ষা করেই সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে একদফা দাবিতে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর ৪টায় থেকে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা 'একদফা' দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের উভয় লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য উপস্থিত রয়েছেন।
বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ না করে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার কথা না শুনে মহাসড়কে নেমে আসার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করলেও শিক্ষার্থীরা পুলিশের অনুরোধ ও বাধা উপেক্ষা করে স্লোগান দিতে দিতে মহাসড়কে নেমে সড়কের উভয় লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিট
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত ২০
কুমিল্লায় চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বলে জানা যায়।
এতে পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
আদোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আজ বিকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ির দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রথমবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাসের আনসার ক্যাম্পের সামনে ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
বিকেল সাড়ে ৩টা
সর্বোচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থার পর কেউ রাস্তা আটকালে ব্যবস্থা নেব: পুলিশ
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত ইতোমধ্যে রায় দেওয়ার পরও কেউ রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহিদ উদ্দিন বলেন, যারা আন্দোলন করছেন, তাদের প্রতি পুলিশের অবশ্যই ভালোবাসা-সহমর্মিতা আছে।
'কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, দেশের প্রচলিত আইন ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে আমরা বাধ্য। যেহেতু শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত, তাই ডিএমপির পক্ষ থেকে আমি বিনীত অনুরোধ করছি, তারা যেন মানুষকে কোনো দুর্ভোগ দিয়ে কর্মসূচি না দেন,' বলেন তিনি।
'কোটা আন্দোলনকারীদের কাউকে আগামী চার সপ্তাহ সড়কে বসতে দেবে না পুলিশ। আজ থেকে শিক্ষার্থীদের আর জনদুর্ভোগ করার কোনো অবকাশ আছে বলে মনে করে না ঢাকা মহানগর পুলিশ,' বলেন মহিদ উদ্দিন।
আন্দোলনকারীরা নির্দেশ না মানলে পুলিশ কী ব্যবস্থা নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের আইন ও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটা অপরাধ বলে গণ্য হবে।