নোমান কে? সাবেক র্যাব কর্মকর্তা যিনি জড়িয়ে পড়েন পিএসসির প্রশ্নফাঁসে
সরকারী কর্ম কমিশন (পিএসসি)-র প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত এবং সিআইডির মামলার ২ নং আসামি মো. নোমান সিদ্দিকী একসময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান- র্যাবে চাকরি করেছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনেরও সদস্য ছিলেন তিনি।
পিএসসির প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপরই মিডিয়ায় তার নাম আসতে শুরু করে। রাতারাতি দেশব্যাপী আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হন নোমান। কিন্ত কে এই নোমান? তার সম্পর্কে আরও জানতে বুধবার লক্ষ্মীপুরে তার গ্রামের বাড়িতে যান টিবিএসের প্রতিবেদক। এসময় গ্রামবাসী ও পরিবারের স্বজনরা নোমানের বিষয়ে নানান তথ্য দেন।
নোমান সিদ্দিকীর বাড়ি জেলার রামগতি উপজেলার রামদয়াল বাজার-সংলগ্ন মেঘনা নদীরপাড়ের চর আলগী গ্রামে।
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন নোমান। ২০১৭ সালে তিনি চাকুরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। এর কিছুদিন পরে স্ত্রী-ও শিক্ষা বিভাগের চাকুরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কথিত গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন এই দম্পতি।
নোমান সিদ্দিকী মরহুম আবু তাহের মিয়ার ছোট ছেলে। তার বড় ভাই হলেন ওমর ফারুক হোসেন। রামদয়াল বাজারে তার একটি ফার্মেসি রয়েছে। ফারুক বলেন, মেজো ভাই মো. সালাউদ্দিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। নোমান ভাইদের মধ্যে ছোট। সেনাবাহিনী ও র্যাব থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই অন্য ভাই ও স্বজনদের সাথে তার সম্পর্ক নেই।
ফারুক জানান, ২০০৭ সালে নোমান ঈশ্বরদী জেলার (বিদ্যুৎ) কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনের মেয়ে সাফিয়া সুলতানা স্বর্নাকে বিয়ে করেন। সাফিয়া শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। বিয়ের পর থেকে পরিবারের কারো সাথে তার সম্পর্ক ছিল না। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। ঈশ্বরদীতে যাতায়াত ছিল। নোমানের স্ত্রী স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রাখতে নোমানকে বারণ করতেন।
ফারুকের অভিযোগ, স্ত্রী সাফিয়া নোমানকে অপকর্মে জড়াতে উৎসাহ দিত। নোমানও সবসময় স্ত্রীর কথায় চলতো। ২০২২ সালেও নোমান একই অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে ৩ মাস জেল খেটেছিল।
"স্থানীয় চর মেহের আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাশ করে নোমান। এরপর ১৯৯৮ সালে সে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদান করে। র্যাবে যোগদানের আগে লাইবেরিয়ায় ১৫ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করেছে। ২০১৭ সালে নোমান স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে অবসর নেয়" - বলেছিলেন ফারুক।
তিনি আরও জানান, নিজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পরিবারকে কিছু জানাতেন না নোমান। তাঁরা শুধু নোমানের গার্মেন্টস ও অন্যান্য ব্যবসার কথা শুনেছেন, কিন্তু কখনো তার প্রমাণ পাননি।
ফারুকের মতে, নোমান কোন ধরনের অপকর্ম করেছিলেন কিনা– সে সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। কারণ তার সাথে পরিবারের কারোই সম্পর্ক ছিল না। গত রমজানে তাদের বাবা আবু তাহের মারা যান। তখন বাড়িতে এসেছিলেন নোমান।
শাহে আলম (৮৭) নামের গ্রামের একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, "বাড়িতে এলে নোমান গ্রামের কারো সাথে তেমন কথা বলতো না। দশটা কথা জিজ্ঞাসা করলে একটার উত্তর করতো। আমরা শুনেছি অবসরে গিয়ে নানান অপকর্মে জড়িয়েছিল নোমান। এজন্য ২০২২ সালে ৩ মাস জেলও খেটেছিল।"
শামছুল হক (৭০) নামের আরেক গ্রামবাসী জানান, "নোমান এলাকায় কোন ধরনের অর্থ-সম্পদ গড়ে তোলেননি। বাবার এক একর জমি ছাড়া আর কিছু নেই এলাকায়।"
শাহাজাহান নামের নোমানের এক স্বজন দাবি করেন, "আমরা শুনেছি নোমানের ঢাকায় ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বহু টাকা পয়সার মালিক সে। তবে এলাকায় তার কিছুই নেই, এবং কোনো আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক নেই।"
পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দেশব্যাপী যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, তাদের একজন হচ্ছেন নোমান সিদ্দিকী। পিএসসির মহাপরিচালকের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর কাছ থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে বিক্রি করতেন নোমান।