রাতেও রেলপথ অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের করা রেলপথ অবরোধ এখনও চলছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকাল ৫টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা ২০ মিনিটে এ খবর লেখা পর্যন্ত চলছে অবরোধ অব্যহত রয়েছে। তারা রেলপথে অবস্থান নিয়ে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে শুরুর দিকে শত শত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকলেও সন্ধ্যার ৭টার পর থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষাথীর সংখ্যা কমতে শুরু করে।
আন্দোলনের অংশ নেওয়া রাবির প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম রেজা বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দাবি রয়েছে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার, তাই আন্দোলন চলছে। আমরা রাত ১০টা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
এর আগে বিকাল ৫টায় কোটা বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবি এবং সারাদেশে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন। এর ফলে রাজশাহীর সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে।
রেলপথ অবরোধের কারণে দুইটি ট্রেন রাজশাহী রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন ট্রেন দুইটির যাত্রীরা।
একই দাবিতে গতকালও শিক্ষার্থীরা সাড়ে ৩ ঘন্টা রেলপথ অবরোধ করে রাখেন।
এর আগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল ৪টায় বিভিন্ন হল ও মেস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন রাবির শত শত শিক্ষার্থী।
আন্দোলনে অংশ নিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। এরপর একটি বিশাল মিছিল নিয়ে প্যারিস রোড হয়ে আবাসিক হলের সামনে দিয়ে এসে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন।
শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দিতে থাকেন। পুরো অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা ও পথনাটক উপস্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
গত সোমবার থেকে সারা দেশের আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবিটি হলো: 'সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।'
তারা বলেন, সরকারি সকল গ্রেডে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করে ন্যূনতম ৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে। যতক্ষণ না কোটা পদ্ধতির সংস্কার হবে ততক্ষণ আন্দোলন চলতে থাকবে।
আন্দোলনকারী রাবির অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'সারাদেশের সাথে সমন্বয় করে আমরা আন্দোলন পরিচালনা করছি। আজকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে শিক্ষাথীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা রেলপথ অবরোধ করেছি। ন্যূনতম ৫ শতাংশ কোটা রেখে সকল গ্রেডে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে।'
রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে রাজশাহী স্টেশনে দুইটি ট্রেন আটকা পড়েছে। বিকেল ৫টার সময় আন্তঃনগর টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা থাকলেও অবরোধের কারণে ট্রেনটি ছাড়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া বিকাল সাড়ে ৩টায় পাবনাগামী আন্তঃনগর ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি রাজশাহীতে ঢুকেছেই ৪টার পর। তারপর ওয়াশে এক ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। এজন্য ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও ছাড়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া আপাতত এখন আর ট্রেন নাই।'