শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনায় নিন্দা ও তদন্তের দাবি জানিয়ে ৩০ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩০ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে ছাত্র নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিও করেন তারা। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ৩০ বিশিষ্টজন নাগরিক গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফের প্রেরিত এ বিবৃতিতে বলা হয়, 'চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও আন্দোলনরত ছাত্রের প্রাণহানি ও বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আমরা ছাত্র নিহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশের পাশাপাশি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি'।
বিবৃতি দেওয়া ৩০ নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন, অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, সৈয়দ হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, নির্মলেন্দু গুণ, সুজেয় শ্যাম, ডা. সারওয়ার আলী, আবেদ খান, কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী বীর প্রতীক, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, খুশি কবীর, হারুন হাবীব, অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, অধ্যাপক শফি আহমেদ, অধ্যাপক আবদুস সেলিম, অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, ম. হামিদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গোলাম কুদ্দুছ, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, শ্যামল দত্ত, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, লাকী ইনাম, সারা যাকের, শিমুল ইউসুফ, সঞ্জীব দ্রং, আহকাম উল্লাহ।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, 'আমরা গভীর উদ্বেগ, বেদনা ও পরিতাপের সঙ্গে বর্তমান ক্রমবর্ধমান সংঘাতময় পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি এবং এর আশু সুরাহা কামনা করছি। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ-প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ছাত্র সমাজ ও সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে অভিন্ন মত জরুরি। পারস্পরিক মতামত গ্রহণ ও মতবিনিময় প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ সাপেক্ষেত রয়েছে। হাইকোর্টের রায়েও সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার-সাধনে অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সংস্কারের বিভিন্ন দিক বিচার-বিবেচনা ও আলোচনা এই মুহূর্তে বিশে চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই। এক্ষেত্রে প্রতিবাদী ছাত্রসমাজের দিক থেকে সুচিন্তিত সংস্কার প্রস্তাবনা যেমন আমরা কামনা করব, তেমনি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞজনের পরামর্শেরও আমরা প্রত্যাশী।
সরকারের পক্ষ থেকে সকল পক্ষের এই আলোচনা প্রস্তাবনা ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সরকার ও আন্দোলনরত ছাত্রসমাজ কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এর সৃজনশীল বাস্তবায়নের অনেক উদাহরণ তারা তৈরি করেছে। ক্ষুব্ধ পরিবেশের ব্যত্যয় যারা ঘটায় তারা ছাত্রসমাজের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে না। কোটা সংস্কারের পক্ষে আদালতের অভিমত ও জাতীয় ঐকমত্য সবাই মিলে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে অগ্রসর হওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি। এই লক্ষ্যে সকলের উদ্যোগী ও সহনশীল ভূমিকা এবং অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ আমরা প্রত্যাশা করি।'