ডিবি-ফটকে ব্যর্থমনোরথ ১২ শিক্ষক: ‘নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হলে পরিবারের সঙ্গে থাকতে না দিয়ে হেফাজতে কেন’
'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের' তিন সমন্বয়কের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি দল ডিবি কার্যালয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এ শিক্ষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকলে শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকতে না দিয়ে কেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হলো।
শনিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি হিসেবে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর ডিবি কার্যালয়ে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারের অবস্থা জানতে যান ওই ১২ শিক্ষক।
এর আগে গতকাল শুক্রবার 'নিরাপত্তাজনিত কারণ'-এর কথা উল্লেখ করে এ তিন শিক্ষার্থীকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় হেফাজতে নেয় ডিবি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক-এর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টের বরাত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী জানান, '১২ জন শিক্ষকের কাউকেই ডিবি অফিসের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।'
আন্দোলনের সমন্বয়কদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এ শিক্ষকেরা।
এদিকে 'নিরাপত্তাজনিত কারণ' দেখিয়ে আজ শনিবার আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি। বিষয়টি টিবিএসকে নিশ্চিত করেছেন ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জুনায়েদ আলম সরকার।
জানা গেছে, শিক্ষকদলটি ডিবি কার্যালয়ে পৌঁছালে তাদেরকে মূল কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ সময় রিসেপশন থেকে তাদরকে বলা হয়, কেবল ডিবিপ্রধানের অনুমতি পেলে ভেতরে যাওয়া যাবে।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর শিক্ষকদের জানানো হয়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ মিটিং করেছেন, তাই তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
ডিবি কার্যালয়ে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন শনিবার রাতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা এ তিন শিক্ষার্থীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে এখনও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কেননা, কোনো সুস্পষ্ট তথ্য তাদের নিকটজনদের কাছে নেই।'
'আমরা আশা করব, এ তিনজনকে অত্যন্ত দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এবং চলমান চিকিৎসা অব্যাহত রেখে সরকার ইতোমধ্যে প্রদত্ত তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করবেন,' বলেন তিনি।
ডিবি-ফটক থেকে ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরে আসাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মো. সাইমুম রেজা তালুকদারসহ সরকারি-বেরসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক।
অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, 'শিক্ষক নেটওয়ার্ক অন্যান্য সমমনা মানুষদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবে।'