সংসদ ভবনে হাজারও জনতা, উল্লাসের পাশাপাশি করেছেন লুটপাট
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সংসদ ভবন ঢুকে পড়েন হাজারো জনতা। বেলা সাড়ে ৩টার পর শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষ জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে সংসদ ভবনে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে জনতার উচ্ছ্বাস, বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছেন এ প্রতিবেদক।
বেলা ৫টার দিকে দেখা যায়, জনতা জাতীয় সংসদ ভবনের বিভিন্ন জায়গা অবস্থান নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। পাশাপাশি কেউ কেউ বিভিন্ন জিনিসপত্রও ভাঙছেন। অনেকে চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
এ সময় উচ্ছৃঙ্খল অনেককে সংসদ ভবনের ভেতরের সুইমিং পুলে নেমে সাঁতার কাটতেও দেখা গেছে।
সব প্রবেশপথ বন্ধ থাকলেও বেলা সাড়ে ৫টার দিকে দেওয়াল বেয়ে বেয়ে মূল ভবনেও ঢুকতে দেখে গেছে অনেককে।
ওই ভবন থেকে কেউ কেউ কাগজপত্র ও অন্যান্য জিনিস বের করছেন। তবে গেট বন্ধ থাকায় বড় কোনো জিনিস বের করতে দেখা যায়নি।
গাছ, টিস্যু ও মাস্ক নিয়ে গেল জনতা
ধানমন্ডি ২৭ থেকে গণভবনের দিকে এগিয়ে সংসদ ভবনের প্রবেশপথ। চারিদিকে গাছঘেরা পথটিতে শুধু মানুষ আর মানুষ। রাস্তার পাশে সবুজঘেরা মাঠটিতে ঢুকছেন মানুষ।
কেউ ওখানকার গাছ তুলে নিয়ে বিজয় উল্লাস করছেন, আবার কেউ গাছ নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
মিডিয়া সেন্টারের সামনে দেখা যায়, প্রবেশপথ ভেঙে মাঝবয়সি তরুণেরা মিডিয়া সেন্টারে প্রবেশ করেছেন। তিনতলা ভবনটিতে দলে দলে ঢুকছেন মানুষ।
ওই ভবনের সরু গেটটি মাড়িয়ে ভবনের ভেতরে থাকা টিস্যু, চায়ের কাপ, চা তৈরির ইলেকট্রিক কেটলি, চেয়ার-টেবিল, মাস্ক ও বই বের করে নিয়ে যেতে দেখা যায় অনেককে।
সুইমিং পুলে মানুষের ঢল
জাতীয় সংসদের মূল ভবনের মাঝখানে রয়েছে সুইমিং পুল। পুলে নামার প্রবেশপথে মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। অপরিষ্কার পানিতে লাফিয়ে পড়ছেন জানতা। তারা সাঁতার কেটে বিজয়োল্লাস করছেন।
১৫-১৬ বছর বয়সি এক তরুণ বলেন, 'অবশেষে স্বস্তি। সংসদ ভবনের পানিতে সাঁতার কাটতে পারলাম।'
পাশ দিয়ে ভেজা কাপড়ে যাচ্ছিলেন আরও কয়েকজন তরুণ, তাদের অভিব্যক্তিও একই যেন — স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।
সংসদ ভবনের ছাদেও মানুষ
সংসদ ভবনে প্রবেশের সব পথই বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারছিলেন না জনতা। প্রথমে একজন তরুণ ভবনের দেওয়াল বেয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। তিনি একটি দরজা ভেঙে ফেললে আরও কয়েকজন তরুণ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন।
তারপর ভবনের ছাদেও উঠতে দেখা যায় অন্তত ১০-১৫ জন তরুণকে। তারা সেখানে পতাকা হাতে নিয়ে বিজয়োল্লাস করেন।
চুরি ঠেকাতে তৎপর একদল তরুণ
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিডিয়া সেন্টার হয়ে বের হওয়ার সময় দেখা যায়, একদল তরুণ মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সংসদ ভবনের কোনো কিছু চুরি না করার আহ্বানা জানান।
এছাড়া কারও হাতে সংসদ ভবনের কোনো জিনিস পেলে রেখে দিতে আহ্বান জানানো হয়। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে উত্তেজিত জনতার অনেকে চেয়ার-টেবিল ও ভারী জিনিসপত্র রেখে চলে যান।
সোমবার ক্ষমতা থেকে পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা বেলা আড়াইটার দিকে বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন।
পরে তাদেরকে বহনকারী একটি বাংলাদেশি সামরিক বিমান ভারতের উত্তর প্রদেশের গজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে (দিল্লির কাছে) পৌঁছায়।
ধারণা করা হচ্ছে শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করবেন না, লন্ডনে চলে যাবেন।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল থাকেন দিল্লিতে।
এদিকে হাসিনার পদত্যাগের পর প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেলা পৌনে ৪টার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি বলেন, 'আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করব। সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।'