আমি যেন গর্ব করে বলতে পারি আসিফ আমার ছেলে, ওর কোনো দুর্নীতি নেই: প্রত্যাশা আসিফের বাবার
'আন্দোলনের প্রথমে বাধা দিয়েছিলাম, যেন বের না হয়। ও আমার কথা শোনেনি। বলেছিলাম, এত কষ্ট করে পড়াশোনা করালাম, ভালো চাকরি করো, মানুষের মতো মানুষ হও। তুমি আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বপ্ন শেষ করে দিও না। কিন্তু ও আমাকে বলেছিল দোয়া করতে। আমি প্রতি নামাজে ও জন্য দোয়া করতাম। ওর মা-ও দোয়া করত, কান্না করত। এখন আল্লাহ ও শ্রম ও সততার পুরস্কার দিয়েছেন। ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েছে।'
কথাগুলো বলছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন।
আসিফ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর গ্রামের মো. বিল্লাল হোসেন ও রোকসানা আক্তার দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। আসিফের বাবা বিল্লাল হোসেন আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে স্বামীসহ জাপানে আছেন। আরেক বোন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আর ছোট বোন রাজধানীর হলিক্রস কলেজে পড়াশোনা করছেন।
আসিফ ২০১৩ সালে কুমিল্লার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পাস করেন। পরে ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকার হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর চলে যান ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে।
আসিফের এই সফলতার খবরে উপজেলাজুড়ে আন্দন্দের জোয়ার বইছে। মসজিদগুলোতে তার জন্য দোয়া ও মিষ্টি বিতরণ করছে স্থানীয় জনতা। অনেকে আসছেন তার ঘরবাড়ি দেখতে।
বিল্লাল হোসেন বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই আসিফ মিশুক প্রকৃতির ও অধিকারের বিষয়ে সচেতন ছিল। তার নেতৃত্ব দেওয়ার আলাদা গুণ লক্ষ্য করেছি। সে যেখানেই গেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে। সে কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমার কড়া নির্দেশনা ছিল যেন রাজনীতিতে না জড়ায়।'
তিনি বলেন, 'ছেলেকে সৎ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। কখনো দুর্নীতির শিক্ষা দেইনি। আমরা আজ গাড়ি ভাড়া করে এসেছি। আমি চাই আমার ছেলে যখন উপদেষ্টা থাকবে না, তখন যেন ও গর্ব করে বলতে পারে যে আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।'
তিনি আরো বলেন, 'আজ যেমন ও পাঞ্জাবি, টি-শার্ট পরে বঙ্গভবনে গেছে, সে যেন এমনই সাধারণ থাকে। আমার ছেলের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। তাকে বাংলার ইতিহাস মনে রাখবে এটা আমার বিশ্বাস আছে। আর আমিও যেন গর্ব করে বলতে পারি, আসিফ আমার ছেলে, তার কোনো দুর্নীতি নেই।'