স্বেচ্ছা অবসরের চিঠিতে ‘জোরপূর্বক’ স্বাক্ষর নেওয়া হয়: ব্রি মহাপরিচালক
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর ৮ আগষ্ট কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্বেচ্ছা অবসরের চিঠি দেন। তবে এ সংস্থা প্রধান টিবিএস-এর কাছে দাবি করেছেন, তার ওই চিঠিতে ব্রি-এর কর্মকর্তাদের একটি অংশ জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়েছেন এবং ডি-নথি আইডি থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বাধ্য করেছেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ব্রি-এর মহাপরিচালক বলেন, অবসরের চিঠিটি বাতিলের জন্য ইতোমধ্যে সচিব বরাবর আরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে আগের অবসরের চিঠিটি আমলে না নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শাহজাহান কবীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অবসরের চিঠিটি জোরপূর্বক দেওয়া হয়েছে। এটিকে বাতিল করতে ইতোমধ্যে আমি নতুন করে আরেকটি চিঠি সচিব বরাবর দিয়েছি। আমি অবসরের সিদ্ধান্ত নিইনি।'
এদিকে মঙ্গলবার গাজীপুরে অবস্থিত ব্রি-তে শাহজাহান কবীরের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সমাবেশ করেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ব্রি পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, পরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. আব্দুল লতিফসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
বক্তারা বলেন, 'শাহজাহান কবীর ক্ষমতায় থাকাকালে শ্রমিক ও কর্মকর্তা নিয়োগ, পদোন্নতি প্রদান, ব্রি মিউজিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, ডিজি'র বাংলো নির্মাণ, গবেষণা প্লটে মাটি ভরাট ইত্যাদি কাজে অনিয়ম করেছেন। আমরা তার সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার ও শাস্তি চাই।'
এর আগে গত ৮ আগষ্ট এসব কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও দাবির মুখে শাহজাহান কবীর স্বেচ্ছা অবসরের চিঠি প্রদান করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ে।
শাহজাহান কবীরের দুটি চিঠিই টিবিএস-এর হাতে এসেছে। প্রথম চিঠিতে এ সংস্থাপ্রধান লেখেন, '৮ আগষ্ট হতে একান্ত ব্যক্তিগত কারণে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিলাম।'
দ্বিতীয় চিঠিতে শাহজাহান কবীর কৃষি মন্ত্রণালয়কে লিখেছেন, '৮ তারিখ দুপুর ১টায় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী অফিসে ঢুকে জোরপূর্বক স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের জন্য তাদের লিখিত আবেদনে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।'
'এমনকি আমার ডি-নথি আইডি থেকে তা আপনার [সচিব] বরাবর পত্রজারি করেন। আমি স্বেচ্ছায় অবসরের জন্য কোনো আবেদন করিনি,' তিনি আরও লেখেন।
এতে আরও বলা হয়, 'আগের চিঠির স্বারক ও সূত্র মোতাবেক প্রেরিত আবেদনটি বর্তমান আবেদন দ্বারা প্রতিস্থাপনের জন্য অনুরোধ করছি।'
চিঠিতে সরকারি বিধি মোতাবেক অবসরের তারিখ ২০২৫ সালের ৩০ মার্চে ৫৯ বছর পূর্ণ হবে জানিয়ে সে তারিখে অবসরোত্তর ছুটিতে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন শাহজাহান কবীর।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রি-এর মহাপরিচালকের স্বেচ্ছা অবসরের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়।
তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শাহজাহান কবীরকে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কিছু কর্মকর্তার দপ্তরে দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শাহজাহান কবীরকে যাতে অবসরে না পাঠানো হয়, সেজন্য কর্মকর্তাদের বোঝাতেই সারাদিন মন্ত্রণালয়ে ছিলেন তিনি।