ডলার সংকটে বেনাপোলে পণ্য আমদানি কমেছে
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক দ্বার বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত কয়েক বছরে আমদানি যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন— যা এর আগের বছরের পণ্য আমদানির তুলনায় ২ লাখ ৮২ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন কম।
কাস্টম ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারেনি।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। আমদানি কম হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। ওই বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ৫৫৮ কোটি টাকা ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছিল। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, "যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যেকারণে গেল অর্থবছরে আমদানি কমে গেছে।"
যশোরের মোটরসাইকেল পার্টসের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক মদিনা অটোসের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, "ডলার চাহিদামতো না পাবার কারণে আমরা এলসি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আবার বাজারে বিক্রি কমেছে। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। এতে করে আমদানিকারকরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছে না। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য আমদানি করছে না।"
অপর আমদানিকরাক জাহিদ হোসেন বলেন, "আমরা মোটর পার্টস আমদানি করে তা সারা দেশে বিক্রি করে থাকি। গত কয়েক বছর ধরে যশোরের ব্যাংক এলসি খুলছে না। যেকারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। পণ্য আনতে না পারার কারণে ব্যবসায়ীকভাবে লোকসান হচ্ছে। সামনে কী পরিস্থিতি হবে কে জানে।"
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, এলসি করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারছে না। ফলে পণ্য আমদানি কমেছে। তবে আশা করা হচ্ছে, চলতি বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেওয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছেনা।
"এতে আমদানির সাথে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে দুরাবস্থায় রয়েছেন। এখন আমদানিকারকরা চরম বেকায়দায় পড়েছে। একেতো বাণিজ্য ভালো নেই, তার উপর পণ্য আমদানি করতে না পারলে আমদানির সাথে জড়িতরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে," বলেন তিনি।
এদিকে, বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন বলেন, "ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছে না। যেকারণে গেল বছর পণ্য আমদানি কমে গেছে। আমাদের এখানে কোন হয়রানি হয়না বলে তিনি দাবি করেছেন।"
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক খুলনা-বরিশাল জোন প্রধান আবদুল মান্নাফ জানান, উচ্চ মার্জিনের কারণে সব ব্যাংকে এলসি কমেছে। ডলার সংকট কেটে গেলে আমদানি সহজ হয়ে আসবে।
ইস্টার্ন ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল হক জানান, "ডলার সংকটে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি কমিয়ে দিয়েছে। আর এলসি করতে না পারলে পণ্য আমদানি কীভাবে করবে!"