অবৈধভাবে লাইসেন্স বাতিলের অভিযোগ, ফের কার্যক্রম শুরু করতে চায় সিটিসেল
দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও প্রথম মুঠোফোন অপারেটর সিটিসেলকে আবারও চালু করতে চায় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম।
এরজন্য কোম্পানির লাইসেন্স এবং স্পেক্ট্রাম ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) আবেদন করেছে কোম্পানিটি।
গ্রাহক কমে যাওয়া এবং বকেয়া টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগে ২০১৬ সালে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবরে সিটিসেলের লাইসেন্স ও স্পেক্ট্রাম বাতিল করে সংস্থাটি। বন্ধ করে দেওয়ার সময় দেশের একমাত্র সিডিএমএ (কোড ডিভিশন মাল্টিপল একসেস) টেকনোলজি অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৫ হাজারের মতো।
তবে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া বিটিআরসির আদেশটি অবৈধ বলে রিভিউ আবেদনের চিঠিতে উল্লেখ করেছে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম।
প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকমের নিয়ন্ত্রক ও কর্পোরেট বিষয়ক প্রধান নিশাত আলী খান বলেন, সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে তরঙ্গ বরাদ্দসহ বিভিন্ন টেকনোলজিকাল আপগ্রেটেশনে সিটিসেলকে যুক্ত করা হয়নি। সব ফি প্রদান করা হলেও অযৌক্তিভাবে নতুন নতুন বকেয়ার কথা তোলা হতো। সর্বশেষ গ্রাহক কমে যাওয়ার কথা বলে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও বন্ধ করার আগেও বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার ছিল সিটিসেলের।
বকেয়া নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকাবস্থায় বিটিআরসি কর্তৃক সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলকে অবৈধ জানিয়ে পুনরায় আদালতে যাবেন বলেও জানান নিশাত আলী খান।
তিনি বলেন, "লাইসেন্স ফেরত পেতে আমরা বিটিআরসিতে আবেদন করেছি। পরবর্তীতের কোর্টেও আবেদন করবো।"
চিঠিতে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম বলছে, বন্ধ করে দেওয়ার সময় কোম্পানিটির হাতে ৮.৮২ জিবি স্পেক্ট্রাম এবং ৮৫০টি টাওয়ার ছিল। বন্ধ করায় প্রতিষ্ঠানটির ১,০০০ কর্মী এখনও বেকার। কোম্পানিটি ভ্যাট, ট্যাক্সসহ সব ধরনের ফি শতভাগ পরিশোধ করেছে। বন্ধ করে দেওয়ার ফলে কোম্পানিটির ৪,০০০ কোটি টাকার দেনায় পড়েছে। চালু থাকলে এ সময় অন্তত ২,০০০ কোটি টাকার রেভিনিউ পেতো।
বিটিআরসি ২১৮ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে লাইসেন্স বাতিল করলেও সেটি সঠিক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ১০ জিবি স্পেক্ট্রামের বিনিময় ফি হিসাবে এ বকেয়া দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সিটিসেলকে দেওয়া হয়েছিলে ৮.৫ জিবি স্পেক্ট্রাম। ফলে ওই দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাছাড়া, বকেয়া দাবি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান ছিল।
বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তখন কেন আদালতে যাননি কেন এমন প্রশ্নে নিশাত আলী খান বলেন, "ওই সময় সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করাটা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। সরকারের সিদ্ধান্তের বাহিরে কোর্টে রায় হতো না। ফলে আমরা তখন আদালতে যাইনি।"
বিটিআরসি লাইসেন্স ফেরত দিলে বিপুল দেনা নিয়ে পুনরায় চালু করা সম্ভব কি–না এমন প্রশ্নে নিশাত আলী খান বলেন, "বন্ধ করার পরও কোম্পানিটি কোনো ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়নি। আমরা লাইসেন্স ফেরত পেতে চাই।"
জিএসএম প্রযুক্তিতে রূপান্তরের আশা
নিশাত আলী খান আরও জানান, লাইসেন্স পেলে সিডিএম থেকে জিএমএসে রূপান্তর করে অপারেশনে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে মালিকপক্ষের।
এদিকে, সিটিসেলের চিঠিপ্রাপ্তি এবং লাইসেন্স ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিনুল হক।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সিটিসেলের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া সব তরঙ্গ ও একই বছরের ৭ আগস্ট রেডিও কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সিটিসেলের ২জি সেবার লাইসেন্স বাতিল করে বিটিআরসি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নব্বইয়ের দশকে দেশের একমাত্র মোবাইল সেবাদাতার ইতিহাস জানা যায়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮৯ সালে সিটিসেলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। হংকংভিত্তিক হুটচিসন ও বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড যৌথভাবে চালু করে সিটিসেল। তারা অ্যানালগ মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করতো। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই মোবাইল–সেবা সাধারণের জন্য ছিল না।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৯৯৩ সালে সিটিসেলের বর্তমানে ৫৫ ভাগ শেয়ারের মালিক হয় দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী প্যাসিফিক মোটরস ও ফার ইস্ট টেলিকম। এরমধ্যে প্যাসিফিক মোটরসের শেয়ারের পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর ফারইস্ট টেলিকমের ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাকি ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিংটেল। প্যাসিফিকের কর্ণধার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান।
১৯৯৬ সালের নভেম্বরে দেশের বর্তমান শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন লাইসেন্স পাওয়ার আগে সিটিসেল ছিল দেশের একমাত্র মোবাইল অপারেটর।