আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ: প্রতিবেদন
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিসহ ভারতীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে করা বিভিন্ন চুক্তি খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ।
অন্তর্বর্তী সরকারের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষভাবে চুক্তির শর্তাবলি এবং বিদ্যুতের যে দাম দেওয়া হয়েছে তা যুক্তিযুক্ত কি না, সেটি জানতে আগ্রহী বাংলাদেশ।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আদানি গ্রুপের মতো ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি খতিয়ে দেখা হবে। …(তাদের সঙ্গে) কী ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, কী শর্তাবলি দেওয়া হয়েছে। দেশের আইন না মেনে বিদেশি কোম্পানি থাকতে পারে না।'
'কাজেই সেসব তদন্ত হবেল তবে এর অর্থ এই নয় যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে। তারা এখানে (বাংলাদেশ) যা যা করছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। তারা এখানে কী করছে, বাংলাদেশ (তাদেরকে) কত টাকা দিচ্ছে, সেটি ন্যায্য কি না—এসব প্রশ্ন উঠে আসবে,' বলেন ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি প্রকল্পই যাচাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি প্রকল্প যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওইসব প্রকল্পের মধ্যে আদানি চুক্তিও আছে।'
আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, বাংলাদেশ আমাদের পিপিএ (বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি) রিভিউ করছে—এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিপুল বকেয়া সত্ত্বেও সত্যিকার অংশীদারত্বের চেতয়ায় আমরা তাদেরকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি।'
২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২৩ সাল থেকে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগপর্যন্ত এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ শুধু বাংলাদেশেই সরবরাহ করা হতো। তবে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারত সরকার আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভারতের বাজারেও বিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি দেয়।
৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) ৮০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করার অনুরোধ করেছে আদানি গ্রুপ।
হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া সমস্যা
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ওই ঊরধ্বতন কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'আমরা ভারতের সঙ্গে স্থিতিশীল ও নিরপেক্ষ সম্পর্ক চাই।'
তবে তিনি শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, হাসিনাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
ভারতে পৌঁছে হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'তবে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া একটা সমস্যা। …প্রথমে আমরা দেখেছি, তিনি কিছুদিনের জন্য সেখানে (ভারতে) আছেন, আর এখন তাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।'
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে ড. ইউনূসকে কোন ধরনের অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তা নিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'হাসিনা প্রশাসনকে নষ্ট করে রেখে গেছেন; অর্থনীতি ধ্বংস করে রেখে গেছেন; দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। …পিয়ন পর্যায়ের লোকেয়া কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে।'
'আমাদেরকে আগে ইনজিনটা চালু করে একে কর্মক্ষম করতে হবে, তারপর সামনে এগোতে হবে,' বলেন ওই কর্মকর্তা।