গ্যাস অনুসন্ধান ও পাইপলাইন প্রকল্পে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক বৈঠক
দুটি নতুন প্রকল্প এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বহী কমিটি) সভায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বুধবার। গ্যাসের চাহিদা পূরণে নতুন গ্যাস কূপ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন এবং শিল্প এলাকায় গ্যাস সরবরাহে দুটি প্রকল্প একনেকের এজেন্ডায় রয়েছে।
প্রধান উদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ এই সভা অনুষ্ঠিত হবে জানা গেছে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে।
প্রস্তাবিত নতুন দুটি প্রকল্পে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৮৮.৪০ কোটি টাকা । অন্যদিকে, যে তিনটি প্রকল্পের ব্যয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩,৭১৭.৩৮ টাকা । এই তিন প্রকল্পে নতুন করে ব্যয় ১২১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮,২১৯.৩ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
যে দুটি নতুন প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে, তারমধ্যে রয়েছে ৫৮৮.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং ২টি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) (পেট্রোবাংলার একটি কোম্পানি) ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত ৪টি কূপ খনন শেষে বাণিজ্যিক গ্যাস আবিষ্কার হলে আনুমানিক গ্যাস ইনিশিয়ালি ইন প্লেস (জিআইআইপি) ৬২০ বিসিএফ বৃদ্ধি পাবে, তারমধ্যে উত্তোলনযোগ্য রিজার্ভ ৪৪২ বিসিএফ। গ্যাস প্রাপ্তি সাপেক্ষে সুন্দলপুর-৪, শ্রীকাইল-৫, সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১ কূপের সম্ভাব্য দৈনিক উৎপাদন হবে যথাক্রমে ১০, ২০, ১৫ ও ১০ এমএমএসসিএফ; অর্থাৎ কূপসমূহ হতে দৈনিক মোট ৫৫ এমএমএসসিএফ গ্যাস উৎপাদন হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে দেশজ গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি হ্রাস পাবে এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, বাখরাবাদ–মেঘনাঘাট–হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবও একনেক সভায় উপস্থাপন হচ্ছে। ২০২১ সালে নেওয়া প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১,৩০৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ব্যয় ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ১,৫৭০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
যদিও বিশেষ সংশোধনির মাধ্যমে আরো একবার ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় প্রকল্পের ব্যয় ১৫০০.১৪ কোটি টাকা করা হয়েছিল।
গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ভূমি উন্নয়ন খাত, রাজস্ব খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
শুধু ব্যয়ই নয় প্রকল্পের মেয়াদও আরো দুই বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকায় সরকারি/বেসরকারি খাতে নির্মিতব্য মোট ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রায় ৫৫০ এমএমএসসিএফডি গ্যাস সরবরাহসহ গজারিয়া, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে কুমিল্লা জেলার বাখরাবাদ হতে নারায়নগঞ্জ জেলার মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২" ব্যাসের ৫০ কি.মি. দীর্ঘ ১,০০০ পিএসআইজি চাপ সম্পন্ন গ্যাস সঞ্চালন (দৈনিক সর্বোচ্চ ১০০০ এমএমসিএফডি সঞ্চালন ক্ষমতাসম্পন্ন) পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া, মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকায় এবং হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় স্থাপিত ও স্থাপিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত নতুন আরেকটি প্রকল্প হলো- ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)। ইউনিসেফ এই প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেবে।
এছাড়া, ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেক সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পটি ২০১৭ সালে ১,৮৬৭.৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একনেকে অনুমোদন হয়। নতুন করে সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় ৫,৮৯৯.৬৬ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।