সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারের
বহুল সমালোচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বরাতে জাতীয় দৈনিক 'প্রথম আলো' জানায়, 'আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।'
গত সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হতে পারে। 'এ আইনে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'শুধু সাইবার নিরাপত্তা আইনই নয়, মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে এমন সমস্ত আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।'
এর আগে গত ৩ অক্টোবর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বলেছিলেন, 'এই আইন বাতিল করতে হবে। আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব যে পুরো আইনটি বাতিল করা হবে, না কি শুধু 'স্পিচ অফেন্স' [মত প্রকাশের স্বাধীনতা] সম্পর্কিত অংশগুলো বাতিল করা হবে। তবে এই আইন অবশ্যই বাতিল করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'অবশ্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিত। সেদিকেই যাব। আল্টিমেট এটা বাতিল হবে। পরবর্তীকালে যখন নতুন আইন হবে, এটার বেসিক অ্যাপ্রোচ থাকবে সাইবার সুরক্ষা দেওয়া, নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া বিশেষ করে।'
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানিয়েছেন, আজ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় 'সাইবার নিরাপত্তা আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪'- এর খসড়া নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বিষয়টি সভার এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। তবে খসড়া অধ্যাদেশের বিশদ এবং অবস্থা এখনও জানা যায়নি।
এ বিষয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর অধীন গত আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট ৫ হাজার ৮১৮টি মামলা চলমান।
বর্তমানে স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত মোট ১ হাজার ৩৪০টি মামলা চলমান, যার মধ্যে ৪৬১টি মামলা তদন্তকারী সংস্থার কাছে তদন্তাধীন। ৮৭৯টি মামলা দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
এসব মামলার মধ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তমত প্রকাশের কারণে দায়ের হওয়া মামলাগুলোকে 'স্পিচ অফেন্স' এবং কম্পিউটার হ্যাকিং বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতিকে 'কম্পিউটার অফেন্স' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত মামলাগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীন ২৭৯টি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন ৭৮৬টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীন ২৭৫টি মামলা চলমান বলে তখন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, বর্তমান সরকার স্পিচ অফেন্স-সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১ হাজার ৩৪০টি স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত মামলার মধ্যে বিচারাধীন ৮৭৯টি মামলা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। তদন্তাধীন ৪৬১টি মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে।