রোজার আগে আমদানি পর্যায়ে একক গ্রাহক ঋণসীমা সাময়িক প্রত্যাহার ও এলসি মার্জিন মওকুফের সিদ্ধান্ত
রমজানের আগে ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমদানি পর্যায়ে একক গ্রাহক ঋণসীমা (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) সাময়িকভাবে প্রত্যাহার এবং এলসি মার্জিন মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) মার্জিন আরোপের সিদ্ধান্ত ব্যাংক-কাস্টমার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করছিল। 'এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, রমজান পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে এলসি মার্জিন না নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার সার্কুলার জারি করবে।'
বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, যেমন সিটি গ্রুপ, মেঘনা, বসুন্ধরা এবং টিকে গ্রুপ ভোজ্যতেল, চিনি ও গমের মতো পণ্য বাল্কে আমদানি করে। এ ধরনের আমদানির ক্ষেত্রে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তাই সাময়িকভাবে দুই-তিন মাসের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান গভর্নর।
গভর্নর বলেন, 'আমি মনে করি, সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইটেরিয়া, যা ভঙ্গ করা উচিত নয়। এটি ব্যাংকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এজন্য ব্যাংকের মূলধন বাড়ানো প্রয়োজন।
তবে রমজান সামনে রেখে বড় আমদানিকারকদের সুবিধার্থে সাময়িকভাবে দুই-তিন মাসের জন্য এ লিমিট প্রত্যাহার করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'ভবিষ্যতে সিঙ্গেল বরোয়ার লিমিট কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং কোনোভাবেই ভঙ্গ করতে দেওয়া হবে না।'
ডলার সংকটের বিষয়ে গভর্নর বলেন, 'বর্তমানে ব্যাংকে ডলার সংকট নেই। যে কেউ যেকোনো ব্যাংকে গিয়ে, যেকোনো পরিমাণ এলসি খুলতে পারবেন।… [আগে] বাজারে ডলার ছিল না। এখন সব ব্যাংকে পাবেন। যদি কোনো ব্যাংক ডলার দিতে না পারে, আমাকে জানান।'
এ সময় ড. আহসান এইচ মনসুর 'টাকা পাবেন না বাজারে, কিন্তু ডলার পাবেন' বলেও মন্তব্য করেন।
সভায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ কমাতে টিসিবির মাধ্যমে প্রতি পরিবারে মাসে ১০ কেজি চাল বিতরণ এবং ওএমএস কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
বর্তমানে টিসিবির কার্ডধারীরা মাসে পাঁচ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন।
এদিকে অর্থবছরের প্রথম চারমাসে কিছু পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় রমজান মাসে চাহিদা বৃদ্ধি সামাল দিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার চাল, চিনি এবং গমসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলোর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ দিয়ে আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, রমজানে চাল, গম, ডাল এবং খেজুরসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) ঋণপত্র খোলার হার প্রায় ৭ শতাংশ এবং এলসি নিষ্পত্তি আড়াই শতাংশ কমেছে।