সাড়ে ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে ৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হত্যার হুমকি
আগামী সোমবারের মধ্যে জনপ্রতি সাড়ে ৮ লাখ টাকা দিতে না পারলে সবাইকে হত্যা করে ভূমধ্যসাগরে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হবে বলে ৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হুমকি দিয়েছে মানব পাচারকারী দালাল চক্র।
ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর গত বুধবার তাদেরকে আটক করে মুক্তিপণ দাবি করে এ চক্রটি। আটককৃতদের কয়েকজন তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন।
জিম্মি থাকা ৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীর ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারী শিক্ষক আব্দুল মুকিত খানের ছেলে মো. সাজানুর রহমান (৩৫), একই গ্রামের সজলু মিয়ার ছেলে আফজল, সেকুল মিয়ার ছেলে নাসির (২০) ও হবিগঞ্জ শহরের নোয়াবাদ এলাকার মৃত সফর আলীর ছেলে উজ্জ্বল (২৭)। বাকিদের নাম-ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
জিম্মি থাকা মো. সাজানুর রহমানের ভাই প্রাইমারি শিক্ষক মো. অছিউর রহমান বলেন, 'গত বছরের ফেব্রয়ারি মাসে আমার ভাই সাজানুর ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। মৌলভীবাজারের মর্তুজা নামে এক দালালের মাধ্যমে সে বেনগাজি পৌঁছে। পরে ছাবু মিয়া নামে আরেক দালালের কাছে সে সাজানুরকে বিক্রি করে দেয়। সেখানে কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়লে আমার ভাই তিন লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে দালাল তৈমুর মিয়া ওকে ইতালি পাঠানোর দায়িত্ব নেয়।'
কিন্তু গত বুধবার থেকে প্রত্যেক জিম্মি পরিবারকে সোমবারের মধ্যে সাড়ে ৮ লাখ টাকা করে দেয়ার জন্য দাবি করছে চক্রটি। অন্যথায় তাদেরকে মেরে ভূমধ্যসাগরে ফেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
শিক্ষক অছিউর রহমান বলেন, তার ভাই সাজানুর ৫ মাস বয়সি এক কন্যার পিতা। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ফেরানোর জন্যই তিনি পরিবারের মতের বিরুদ্ধেই বিদেশে পাড়ি জপমান।
অছিউর রহমান বলেন, 'এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দালালেরা হাতিয়ে নিয়েছে। একদিকে ভাইয়ের জীবন, অন্যদিকে দালালদের দাবি পূরণ কীভাবে করব, এ নিয়ে চিন্তা করছি। ভূমধ্যসাগরের মধ্যে নৌযানে আটকে রেখে আমার ভাইকে দালালেরা নির্যাতন করছে।'
জিম্মি থাকা মো. নাসির মিয়ার বাবা সেকুল মিয়া বলেন, 'আমি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। ইতোমধ্যে জমিজমা বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা তৈমুর দালালকে দিয়েছি। এখন আরো সাড়ে ৮ লাখ টাকা না দিলে আমার বুকের ধনকে ওরা মেরে ফেলবে। অনেক নির্যাতন চালাচ্ছে ওর ওপর। দয়া করে আমার ছেলেটাকে বাঁচান।'
আফজলের পিতা বলেন, ৫ মাসেও দালালেরা তাকে ইতালি পৌঁছে দিতে পারেনি। অথচ ইতিমধ্যে জমিজমা বিক্রি করে তারা দালালদের ১৬ লাখ টাকা দিয়েছেন।
আরেক জিম্মি উজ্জ্বলের শ্বশুর মো. ফারুক মিয়া বলেন, 'ধারদেনা করে আমাদের না জানিয়েই উজ্জ্বল বিদেশ চলে গিয়েছিল। আমার মেয়ের একটি বাচ্চা সন্তান রয়েছে, ওর কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে মেয়ে ও নাতিদের ভবিষ্যত কী হবে, তা ভেবে পাচ্ছি না।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দালালদের হাতে জিম্মি পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তারা বলেছেন, তাদের কারোর হাতেই নগদ টাকা নেই।
বন্দি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, বাংলাদেশি দালালদের হাতেই আটক রয়েছেন তাদের স্বজনরা। বর্তমানে যে চক্রটি তাদের জিম্মি করেছে তাদের অন্যতম হোতা হবিগঞ্জের তৈমুর মিয়া বলে দাবি তাদের।
এদিকে দালাল তৈমুরের স্ত্রীর সাথে জিম্মিদের পরিবার যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তৈমুরের সাথে বেশ কিছু দিন ধরে তার যোগাযোগ নেই।