বিএম ডিপোয় অক্ষত ৮০০ টিইইউস পণ্য, খালাসে বাধা নেই
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বিএম কনটেইনার ডিপোতে ৮০০ টিইইউস রপ্তানি ও আমদানি পণ্য অক্ষত আছে। এসব পণ্য খালাসে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। বৃহস্প্রতিবার দুপুরে বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম।
তিনি বলেন, 'বিএম ডিপো অফডকে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে দুর্ঘটনার কারণে যেসব আমদানি-রপ্তানি পণ্য ডিপোটিতে আটকা পড়েছে তা খালাসে কোনো বাধা নেই। ইতোমধ্যে অনেকেই ডিপোতে আটকে থাকা পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।'
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তদন্ত সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এখন ডিপো থেকে পণ্য খালাস করা যাবে।'
চট্টগ্রাম কাস্টমস ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের এ ঘোষণাকে ইতিবাচক বলছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং দেশের আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের (বাফা) বরাত দিয়ে বিজিএমইএ'র সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত কনটেইনারগুলো পরীক্ষা করে ৮০০ টিইইউস রপ্তানি ও আমদানি পণ্য অক্ষত পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, 'অক্ষত পণ্যগুলো দ্রুত শিপমেন্টের ব্যবস্থা করা জরুরী। কারণ, এসব কনটেইনার রপ্তানি করা না গেলে রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাস্টমসের এই ঘোষণার কারণে সেই বাধা কেটে গেলো। এখন যত দ্রুত সম্ভব বিএম ডিপো থেকে পণ্যগুলো অন্য ইয়ার্ডে নিয়ে সেখান থেকে জাহাজীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এটা করা প্রয়োজন।'
তবে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন অভিযোগ করে বলেন, 'কাস্টমস যদিও বলছে তারা বিএম ডিপো থেকে পণ্যগুলো অন্য ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া বা জাহাজীকরণের আবেদন পাচ্ছে। কিন্তু আসলে সে কাজ এখনো শুরু হয়নি।'
গার্মেন্টস মালিকরা ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) ভিত্তিতে পণ্য বিক্রি করেন। এই পদ্ধতিতে রপ্তানি পণ্য ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এজেন্টের কাছে হস্তান্তর করার পর রপ্তানিকারকের দায়িত্ব শেষ হয়।
পুনর্নির্মিত হবে বিএম ডিপো
বিএম ডিপোর দায়িত্বে থাকা স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, 'কাস্টমস এবং বন্দর আমাদের অপারেশনাল কার্যক্রমের অনুমতি দেয়নি। তবে শুক্রবার থেকে ডিপোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করছি। ডিপোটিকে পুনর্নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য নতুন নকশার প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে, সে তথ্য অবগত করে ১০ সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি।'
অফডকে আটকে পরা আমদানি-রপ্তানি পণ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমদানি ও রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন, আমদানি করা কাঁচামাল না পাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণের মেয়াদ পেরিয়ে যাচ্ছে। তাই কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পেলেই আমরা কনটেইনারগুলো খালাসের ব্যবস্থা করবো।'
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'ডিপো কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কাজ করতে পারবে, এতে কোনো বাধা নেই।'
বিজিএমইএ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার আগে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে পোশাক রপ্তানিকারী ১৪১ প্রতিষ্ঠানের ৪৭ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ছিল। এসব তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কে যাওয়ার কথা ছিল।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলেন, 'পুড়ে যাওয়া পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যের ক্রেতা সুইডেনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড এইচঅ্যান্ডএম। তাছাড়া টার্গেট, ওয়ালমার্ট, টপ গ্রেড, গ্যাস্টন, ফিলিপস ভ্যান হিউসেন, পিভিএইচ, এমবিএইচ, চ্যাপ্টার ওয়ান স্পোর্টস ওয়্যার, সিঅ্যান্ডএ বায়িং, নিউ ফ্রন্টেয়ার, রচি ট্রেডার্স ইনকরপোরেশন ও বিএএসএসের কেনা পণ্যও আগুনে পুড়েছে।'
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের ডিরেক্টর (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, দুর্ঘটনার আগে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে ৩৫ লাখ ১১ হাজার ৭৩৪ ডলার মূল্যের ২ লাখ ১৯ হাজার ২০৪ কার্টন পণ্য বিএম ডিপোতে পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। এসব পণ্যের কতটুকু অবশিষ্ট আছে সে হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।