শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে পারিবারিক কলহে আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের আইকনিক নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে এতকাল পরেও রহস্যের শেষ নেই। তদন্ত করে আজ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, লাখও মানুষের এই স্বপ্নের নায়ক খুন হননি; বরং আত্মহত্যা করেছেন।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
চলচ্চিত্র জগতে সালমান শাহর আগমন ঘটে ১৯৯৩ সালে। প্রথম চলচ্চিত্র 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। নিজস্ব ফ্যাশন-রুচি ও স্মার্টনেসের কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে আইডলে পরিণত হন তিনি।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সালমান। এর মধ্যে রয়েছে- 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত', 'তুমি আমার', 'অন্তরে অন্তরে', 'সুজন সখি', 'বিক্ষোভ', 'স্নেহ', 'স্বপ্নের ঠিকানা', 'এই ঘর এই সংসার', 'তোমাকে চাই', 'স্বপ্নের পৃথিবী', 'সত্যের মৃত্যু নেই', 'স্বপ্নের নায়ক', 'আনন্দ অশ্রু' প্রভৃতি। সালমান অভিনীত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই সুপারহিট হয়েছে।
সালমান শাহর আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরে নানা বাড়িতে তার জন্ম। টেলিভিশন নাটক দিয়ে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন। এরপর তার আগমন ঘটে চলচ্চিত্রে।
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায়ই, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যময় মৃত্যু ঘটে রুপালি পর্দার এই তারকার। সেই থেকে এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।
প্রথমে সালমান শাহর বাবা অপমৃত্যুর মামলা দাখিল করলেও ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সেটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। তদন্ত শেষে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে সে বছরের ৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ১৯ মে সেটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট দাখিল করা সেই তদন্ত প্রতিবেদনেও সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সে বছরের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা বিচার বিভাগী তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং পরবর্তীকালে নারাজি আবেদন করেন। আদালত নারাজি আবেদন মঞ্জুর করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা পিবিআইকে নির্দেশ দেন। অবশেষে পিবিআই বলছে, সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন। এর কারণ হিসেবে বলে হয়, নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন সালমান।
পিবিআই জানায়, প্রায় ২৫ বছর আগের ঘটনা বলে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের জবানবন্দি গ্রহণ করতে বেশি সময় লেগেছে। ১৬৪ ধারায় ১০ জনের জবানবন্দি নিয়েছে পিবিআই। পিবিআই নতুন করে আলামত হিসেবে একটি ফ্যান জব্দ করেছে। ধারণা করা হয়, ওই ফ্যানে ঝুলেই আত্নহত্যা করেছিলেন সালমান।