অস্কারে ইতিহাস গড়া হ্যালি বেরির বিখ্যাত সেই পোশাকের পেছনের গল্প!
'মনস্টারস বল' সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ২০০২ সালে অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার জিতে ইতিহাস গড়েন হ্যালি বেরি। অ্যাওয়ার্ডটির ৯৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পুরস্কারটি জিতেছিলেন তৎকালীন ৩৫ বছর বয়সী এ তারকা।
সেদিন লস এঞ্জেলসের কোডাক থিয়েটারে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে ভিন্নধর্মী এক পোশাক পরে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন হলিউডের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। কিন্তু এ পোশাকের পেছনেও রয়েছে এক গল্প; যা উঠে এসেছে এল পাইসের প্রতিবেদনে।
গত বছর নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্কারের স্মৃতিচারণা করতে যেয়ে হ্যালি বলেন, "ওই সময়টাতে সাধারণত গোল্ডেন গ্লোব পুরষ্কার না জিতলে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জেতা যেত না। তাই আমি পুরষ্কারটি জেতার আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছিলাম।"
পুরষ্কার জেতার সম্ভবনা নেই মনে করেও অনন্য ডিজাইনের এক পোশাক পরে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন হ্যালি। পোশাকটির উপরের অংশে ছিল এমব্রয়ডারির নিখুঁত নকশা ও নিচের অংশে ছিল মেরুন রঙের লম্বা একটি স্কার্ট।
তবে পোশাকটি কিন্তু হ্যালির অস্কার মঞ্চে পরার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়নি। বরং ভার্সাচে-র ২০০২ সালের সংগ্রহ হিসেবে পোশাকটি তৈরি করেছিলেন লেবাননের ডিজাইনার এলি সাব। এমনকি ২০২১ সালের ১২ জুলাই ফ্রান্সের এক ফ্যাশন সপ্তাহে পোশাকটি প্রদর্শনও করা হয়েছিল।
বর্তমানে অনেক তারকাই পূর্বে ডিজাইন করা পোশাক পরে রেড কার্পেটে উপস্থিত হন। তবে ২০০০ এর দশকে হলিউড মহলে ব্যাপারটি ততটা প্রচলিত ছিল না। এ প্রথা ভেঙে হ্যালির জন্য পোশাকটি পছন্দ করেছিলেন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত স্টাইলিশ ফিলিপ ব্লচ।
যদিও ফিলিপ পোশাকটি এমি অ্যাওয়ার্ডে অন্য এক অভিনেত্রীর জন্য প্রাথমিকভাবে পছন্দ করেছিলেন। পরবর্তীতে সার্বিক লুকের সাথে পোশাকটি মানানসই মনে না হওয়ায় তা বাদ দেওয়া হয়।
২০০২ সালে কানাডার দ্য গ্লোব এন্ড মেইলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিপ বলেন, "হ্যালির জন্য অস্কার মঞ্চের পোশাক ঠিক করতে যেয়ে ঐ পোশাকটির কথা আবার মনে পড়ে। তখন আমার মনে হয়, এটাই একজন বিজয়ীর পোশাক, এটাই অস্কারের পোশাক। এমন সঠিক সময়ের জন্যই পোশাকটি অপেক্ষা করছিল।"
এলি সাবের ডিজাইন করা পোশাকটি প্রথম দেখাতেই খুব পছন্দ করেছিলেন অভিনেত্রী হ্যালি। তবে পোশাকটি পরে অস্কার মঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া তৎকালীন প্রেক্ষাপটে হলিউডের এ অভিনেত্রীর জন্য সহজ ছিল না। কেননা সেই সময়ের টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রথাগত মানদণ্ড অনুযায়ী পোশাকটি একটু বেশিই খোলামেলা ছিল।
তাই স্টাইলিস্ট ফিলিপ ও হ্যালি বেরি পোশাকটির ডিজাইন হালকা পরিবর্তনের চিন্তা করেন। এজন্য হলিউডের বিখ্যাত দর্জি ম্যাডেলিন আইকেনবার্গকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। আইকেনবার্গ পোশাকের উপরের অংশে বাড়তি এমব্রয়ডারির কাজ করেন।
ডিজাইনার এলি সাব বলেন, "আমি মনে করি, পোশাকটি একইসাথে মার্কিন ও আফ্রো-আমেরিকান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেছে। এটি যেমন সুজজ্জিত; তেমনি সাধারণ ও আরামদায়ক। পোশাকটি আহামরি না হলেও চিরস্মরণীয়।"
এলি সাবের তৈরি পোশাকটি পরেই হলিউড ও একাডেমি ইতিহাসে জায়গা করে নেন হ্যালি। নিকোল কিডম্যান, জুডি ডেঞ্চ, রেনে জেলওয়েগার, সিসি স্পেসেকের মতো খ্যাতিমান অভিনেত্রীর ভিড়ে পুরস্কারটি নিজের করে নেন এ কৃষ্ণাঙ্গ তারকা।
অনুষ্ঠান মঞ্চে আবেগঘন মুহূর্তে অভিনেত্রী হ্যালি বলেন, "আমার অর্জনটি ডরোথি, লিনা ও ক্যারলের মতো অভিনেত্রীদের উৎসর্গ করতে চাই। আমাকে অনুপ্রেরণা দেওয়ায় জাডা পিংকেট, এঞ্জেলা ব্যাসেট, ভিভিকা ফক্সের কথাও স্মরণ করতে চাই। একইসাথে পুরষ্কারটি ভিন্ন বর্ণের সকল অখ্যাত নারীদের উৎসর্গ করতে চাই। কেননা আজ আমার পুরস্কারটি অর্জনের মধ্য দিয়ে নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।"
অস্কারে হ্যালির বাজিমাতের পর ডিজাইনার সাবের ক্যারিয়ারও যেন পাল্টে যায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। বিখ্যাত সব ফ্যাশন শো-তে তিনি অংশ নিতে থাকেন।
ডিজাইনার সাব ১৯৮২ সালে ১৮ বছর বয়সে একটি পোশাকের দোকান খোলার মাধ্যমে নিজের ডিজাইনিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। অবশ্য ২০০২ সালে হ্যালি অস্কার মঞ্চে ডিজাইনারকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আগেও জর্ডানের রানি রানিয়ার মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তার গ্রাহক ছিল।
পরবর্তী সময়ে হ্যালির পোশাকটি অস্কার ইতিহাসে স্মরণীয় পোশাকের তালিকায় জায়গা করে নেয়। এমনকি উইকিপিডিয়ার 'আউটস্ট্যান্ডিং রেড কার্পেট স্টাইল' ক্যাটাগরিতেও ২০০০ সালে গ্র্যামিতে জেনিফার লোপেজের পরা আইকনিক পোশাকের পাশে হ্যারির পোশাকটির নাম রয়েছে।
সাবের ডিজাইন করা আইকনিক পোশাকটি ২০২১ সালে লস এঞ্জেলসে অবস্থিত একাডেমি মিউজিয়ামে জায়গা করে নিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার এক পোস্টে অভিনেত্রী হ্যালি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পোশাকটি সম্পর্কে হ্যালি বলেন, "মিউজিয়ামের কিউরেটরদের তত্ত্বাবধানে থাকা সাবের ডিজাইনকৃত পোশাকটি সকল প্রজন্মের মানুষের প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। একইসাথে পোশাকটি সবসময় এই বার্তা দেবে যে, 'চাইলে সবকিছু করা সম্ভব'।"
বর্তমানে নেটফ্লিক্সে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সাই-ফাই ঘরানার সিনেমা 'দ্য মাদারশিপ' নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন অভিনেত্রী হ্যালি বেরি।