জাগো বাহে: গল্পের চেয়েও বেশি কিছু
তথ্য ডিজিটালাইজেশনের ফলে তথ্য সহজলভ্য হওয়া এবং ভুল তথ্যের ছড়াছড়িতে বর্তমানের তরুণদের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস শেখা এবং বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি বই পড়ায় অনেকের আগ্রহও কম।
এ অবস্থায়, দেশের নতুন প্রজন্মের সামনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আসল চিত্র তুলে ধরতে আসছে চরকির নতুন মৌলিক মিনিসিরিজ 'জাগো বাহে'।
১৯৫২, ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই মিনিসিরিজ। তিন সময়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিরিজের তিনটি পর্ব।
শব্দের খোয়াব
সিরিজের প্রথম পর্ব 'শব্দের খোয়াব।' সিদ্দিক আহমেদ পরিচালিত এ পর্বটি ৫২'র ভাষা আন্দোলনের একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি।
উর্দুকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জিন্নার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদকারী ছাত্রদের কুচকাওয়াজের মাধ্যমে পর্বটি শুরু হয়। দর্শকদের গল্পে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় প্রথম দৃশ্যটি।
এই পর্বে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে দেখানো হয়, একজন সুপারভাইজার কর্মচারীদেরকে অফিসে উর্দুতে কথা বলতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এমনকি তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করলেও উর্দুতে কথা বলতে বলছেন তিনি।
কর্মীরা প্রথমে এই আদেশের কারণ বুঝতে পারে না। নাটকের মনস্তাত্ত্বিক দিকটি এমনভাবে চিত্রিত হয়েছিল যে, পুরো প্লট জুড়েই পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতা ছিল স্পষ্ট।
এই পর্বের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী চরিত্রটি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীলভাবে পরিবেশন করেছেন। এছাড়া লুৎফুর রহমান জয় চমৎকারভাবে উর্দুভাষী বসের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পুরো পর্ব জুড়ে তার সাবলীল উর্দু অনায়াসে চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।
লাইটস, ক্যামেরা...অবজেকশন
বিশিষ্ট লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান ১৯৭০ সালে নির্মাণ করেন 'জীবন থেকে নেওয়া' নামক কালজয়ী ছবি। এই ছবির গল্পের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম-পাকিস্তানি প্রশাসনের নিপীড়নমূলক প্রকৃতিকে রূপকভাবে তুলে ধরা হয়।
ছবিটির প্লটলাইন বিতর্কিত হওয়ায় এবং 'জাতীয়তাবাদী অনুভূতিতে আঘাত' করার অভিযোগে তৎকালীন সেন্সর বোর্ড কর্তৃক ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়।
এই পর্বটি সেন্সর বোর্ডের সেই অবিচারের ঘটনাটিই পর্দায় নিয়ে আসা হয়েছে।
'লাইটস, ক্যামেরা...অবজেকশন' পরিচালনা করেছেন সালেহ সোবহান আনিম। পুরো পর্বটি জহির রায়হান এবং সেন্সর বোর্ডের মধ্যকার একটি কথোপকথনকে কেন্দ্র করে নির্মিত।
এছাড়া রাও ফরমান আলীর সাথে আরেকটি কাল্পনিক কথোপকথনও রয়েছে এ পর্বে। এই কথোপকথন মূলত আমাদেরকে '১২ অ্যাংরি মেন' ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়; যেখানে 'শান্তি রক্ষা'কে নাগরিকদের কাছ থেকে তাদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বাকস্বাধীনতা কীভাবে একটি দুর্বল সরকারকে হুমকির মুখে ফেলেছিল, সেটিও তুলে ধরা হয়েছে এ পর্বে।
জহির রায়হানের চরিত্রে এ পর্বে অভিনয় করেছেন মোস্তফা মনোয়ার এবং রাও ফরমান আলীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্তেখাব দিনার।
বাঙ্কার বয়
সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ পর্ব 'বাঙ্কার বয়।'
পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার চরিত্রে এ পর্বে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান এবং তথ্যদাতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবদুল্লাহ আল সেন্টু।
এই পর্বে মূলত একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন পাকিস্তানি সামরিক অফিসারের মধ্যে একটি জটিল কথোপকথন চিত্রিত হয়েছে।
যে কোনো দ্বন্দ্বের একটি গভীর এবং বিধ্বংসী মনস্তাত্ত্বিক দিক থাকে। 'বাঙ্কার বয়'-এর পরিচালক সুকর্ণ শহীদ ধীমান দর্শকদের সামনে যুদ্ধের সত্যতা তুলে ধরেছেন। কী কারণে যুদ্ধ হয় এবং কারা এর শিকার হয়, তা দেখানো হয়েছে এ পর্বে।