সৌর বিদ্যুৎ: পর্যাপ্ত জায়গা নেই? মহাসড়কই হতে পারে সমাধান
বিগত দশকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠলেও বেশ কিছু সমস্যার কারণে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রকল্পগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল সৌর শক্তির জন্য অপর্যাপ্ত ভূমি বরাদ্দ- এক মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদনের জন্য তিন একর ভূমির প্রয়োজন পড়ে; বায়ুশক্তির সম্ভাবনা বোঝার সীমাবদ্ধতাও এক্ষেত্রে দায়ী। অন্যান্য পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎসও বাংলাদেশে অবহেলিত।
গত দশকে সরকার বেশ কয়েকটি সৌর শক্তি প্রকল্পে অর্থায়ন করে। কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়েছে। অব্যবহৃত চর বা ডুবোচরে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ১০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কিছু কন্ট্রাক্ট বিজেতা সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে একত্রে কাজ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাও কাজে আসেনি।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে সৌর বিদ্যুৎ প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন না আসলে বাংলাদেশে কখনোই সৌর বিদ্যুতের অর্থবহ ব্যবহার শুরু হবে না। বাংলাদেশে জমি অত্যন্ত মূল্যবান, এর দামও বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আবাদযোগ্য জমি সোলার প্যানেল দিয়ে ছেয়ে ফেলাও কাজের কথা নয়।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে বাস্তবায়িত অনেক প্রকল্প থেকে ধারণা নিতে পারে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ কোরিয়া দেজং ও সেজংয়ের মধ্যবর্তী সড়কে সোলার প্যানেল আচ্ছাদিত বাইক লেনসহ মহাসড়ক তৈরি করেছে, সড়কটির দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার।
গত দশকে বিভিন্ন দেশে সৌর মহাসড়কের ধারণাটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসে মহাসড়কে পাইলট প্রকল্প উন্মোচিত হয়। বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেল মহাসড়কে ৪৭ মেগাওয়াট সোলার সিস্টেম তৈরির প্রস্তাবনা দেয়, প্রকল্পটি এখনো সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
জার্মানির ১৩ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অটোবান মহাসড়ক ক্যানোপি সংযুক্ত সৌরশক্তি সিস্টেমের আওতায় আনা যায় কিনা তা জানতে ৩ বছর মেয়াদী গবেষণা চালাচ্ছে জার্মান ও অস্ট্রিয়ান গবেষকরা। তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন ৫৬ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সিস্টেম নির্মাণ সম্ভব হবে।
জার্মানির ফ্রেইনহোফার ইনস্টিটিউট ফর সোলার এনার্জি সিস্টেমসের (আইএসই) পিভি মডিউল প্রোডাক্ট দলের প্রধান মার্টিন হেনরিখের মতে, এ পরিমাণ ফটোভোলটাইক ক্যানোপি প্রতি বছর প্রায় ৪৭ টেরাওয়াট ঘণ্টা শক্তি উৎপাদন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় গত বছর আরেকটি ফটোভোলটাইক রোডওয়ে সিস্টেম উন্মোচিত হয়। এর মাধ্যমে সৌর শক্তিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের চার্জিং স্টেশনের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের বর্তমান কাজ থেকে বাংলাদেশের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও শেখার অনেক কিছুই আছে। কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন পরিচালিত বেশ কয়েকটি নিষ্ক্রিয় সাইটে বর্তমানে দেশটির ভূমি মন্ত্রণালয় ১৪৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ৩১৯ টি সৌর অ্যারে পরিচালনা করছে।
বেসরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের প্রকল্প স্থাপনের জন্য ২০ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় পড়ে থাকা সাইট লিজ দেওয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ২০২১ সালে প্রায় ৩০ মেগাওয়াট এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪৩ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
সৌর মহাসড়ক ভূমি সংকটের সমাধান হলেও এর নেতিবাচক দিক হল এক্ষেত্রে ব্যবহৃত সৌর প্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণে তুলনামূলক বেশি সময় ও অর্থ প্রয়োজন। মহাসড়কে দূষণের কারণে ধূলাবালি বেশি, ফলে সহজেই প্যানেলে ধূলাবালি জমে যায়- কার্যক্ষমতাও কমে আসে। প্যানেলগুলো পরিষ্কার রাখতে বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সৌর মহাসড়ক নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়টি গুরূত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হয়নি।
কয়েকটি মহাসড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণসহ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। মহাসড়কে সৌর প্যানেল সংযুক্ত করার, পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হওয়ার এবং মোট উৎপাদিত শক্তির অন্তত ১০ শতাংশ পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন শুরু করার ব্যাপারে সরকারের চিন্তা করার এখনই সময়।
- লেখক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নির্বাহী সম্পাদক
- লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন: Solar power: Not enough land? Consider the highways