ইউরোপে খরা: পানির নিচ থেকে ভেসে উঠছে পাথর-প্রবাল-জাহাজের ধ্বংসাবশেষ
কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপজুড়ে চলছে প্রচণ্ড খরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত ৫০০ বছরে সবচেয়ে বড় খরা দেখছে ইউরোপ। তীব্র দাবদাহে নদ-নদী ও হ্রদ, খাল-বিলের পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, বহুকাল ধরে পানিতে নিমজ্জিত থাকা প্রবাল, পাথর ও জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে।
বিগত কয়েক দশকে সবচেয়ে খারাপ খরার সম্মুখীন হয়েছে স্পেন। দেশটির প্রত্নতাত্ত্বিকরা পানির নিচ থেকে সম্প্রতি 'স্প্যানিশ স্টোনহেঞ্জ' নামে পরিচিত একটি প্রাগৈতিহাসিক পাথরবৃত্ত ভেসে উঠতে দেখেছেন। সাধারণত পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে এই পাথরবৃত্ত। কিন্তু খরার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তা এখন বেরিয়ে এসেছে।
অনুষ্ঠানিকভাবে 'ডলমেন অফ গুয়াডালপেরাল' নামে পরিচিত পাথরবৃত্তটি বর্তমানে ক্যাসারেস প্রদেশের ভ্যালদেকানাস জলাধারের এক কোণে সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, পানির স্তর এখানে প্রায় ২৮ শতাংশ নিচে নেমেছে।
এই পাথরবৃত্ত ১৯২৬ সালে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক হুগো ওবারমায়ার। কিন্তু ১৯৬৩ সালে ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর একনায়কত্বের সময়, এক গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে এলাকাটি বন্যায় প্লাবিত হয়। এরপর থেকে মাত্র চারবার সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান হয়েছে এই পাথরবৃত্ত।
রাইন নদীর তীরে তথাকথিত 'হাঙ্গার স্টোনের' পুনঃআবির্ভাবও জার্মানিতে অতীতের খরার স্মৃতি আবার জাগিয়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে জার্মানির বৃহত্তম নদীর তীরে এমন আরও অনেক পাথর দৃশ্যমান হয়ে উঠতে দেখা গেছে।
ভেসে ওঠা অনেক পাথরেই লেখা রয়েছে তারিখ। অনেকেই বলছেন, অতীতের খরায় লোকেরা যে কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিল, তার স্মৃতি ও সতর্কবার্তা বহন করছে এ সব পাথর। ফ্রাঙ্কফুর্টের দক্ষিণে ওয়ার্মস এবং লেভারকুসেনের কাছে রেইনডর্ফের কাছে ১৯৪৭, ১৯৫৯, ২০০৩ এবং ২০১৮ সাল লেখা অনেক পাথর এখন দৃশ্যমান।
প্রায় এক শতাব্দীতে খরার ফলে পানির স্তর সবচেয়ে নিচে নেমেছে ইউরোপের দানিউব নদীর। এর ফলে সার্বিয়ার নদীবন্দর শহর প্রাহোভোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডুবে যাওয়া ২০ টিরও বেশি জার্মান যুদ্ধজাহাজের ধ্বংসাবশেষ ভেসে উঠেছে।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত বাহিনীকে ঠেকাতে এই জাহাজগুলো নামিয়েছিল তৎকালীন জার্মানির নাৎসিবাহিনী। পানির স্তর কমে যাওয়ায় এগুলো ভসে উঠতে শুরু করেছে এবং স্বাভাবিক জাহাজ চলাচলে এই ধ্বংসাবশেষগুলো এখন সমস্যা তৈরি করছে।
ইতালির পো নদীর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সে দেশের সরকার। জুলাইয়ের শেষের দিকে দেশটির দীর্ঘতম এই নদী থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। বোমাটির ওজন সাড়ে ৪০০ কেজি (১,০০০ পাউন্ড)।
চলতি মাসের শুরুতে, মান্টুয়া শহরের কাছাকাছি বোরগো ভার্জিলিও নামে একটি গ্রামে সমর বিশেষজ্ঞরা বোমাটি নিষ্ক্রিয় করতে এর নিরাপদ বিস্ফোরণ ঘটান। এরজন্য গ্রামের প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দাকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছিল।
- সূত্র: রয়টার্স