ভারতে এক মুসলিম ছাত্রকে একে একে চড় দিতে সহপাঠীদের নির্দেশ দিলেন শিক্ষিকা
ভারতে এক স্কুল শিক্ষিকার হাতে শ্রেণিকক্ষে অপমানজনক আচরণের শিকার হয়েছেন সাত বছর বয়সী এক মুসলিম ছাত্র। তাকে থাপ্পড় দিতে শিশুটির সহপাঠীদেরকে নির্দেশ দেন সে শিক্ষিকা। সে ছাত্রকে ধর্মের কারণে বহিষ্কার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে সে ঘটনার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে। চলছে আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক।
ঘটনা ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের এক বেসরকারি বিদ্যালয়ে। শুক্রবার প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষের মাঝামাঝি চেয়ার-টেবিল পাতা। বসে রয়েছেন শিক্ষিকা। এক পাশে মেঝেতে শিক্ষার্থীরা বসা, অন্য পাশে এক শিশুশিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে। এক এক করে শিশুশিক্ষার্থীরা উঠে আসছে, দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীকে মারছে। এরপর নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ছে। পুরো ঘটনা ঘটছে শিক্ষিকার সামনে, তার তত্ত্বাবধানে।
এসময় শিক্ষিকার অন্য প্রান্তে বসা এক লোকের কণ্ঠ শোনা যায়। যিনি থাপ্পড় মারাকে উৎসাহিত করছিলেন। শিক্ষিকা এবং সে ব্যক্তিকে ইসলাম বিদ্বেষী কথা বলতে শুনা যায়।
জানা গেছে শিক্ষিকার নাম তৃপ্তি তেয়াগি। ভিডিওতে শুনা যায় শিক্ষিকা বলছেন, সব মুসলিম শিক্ষার্থী চলে যাওয়া উচিত। তখন সে ব্যক্তি বলছিলেন, হ্যাঁ, এটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করছে। শিক্ষিকাকে আরো জোরে চড় দিতে উৎসাহ দিতেও শোনা যায়।
এসময় শিশুটি চড় খেয়ে মুখ ব্যাথা হয়ে যাওয়ায় শরীরের অন্য অঙ্গে মারার অনুরোধ করে।
সাত বছর বয়সী সে শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ আলতমাশ। তার পিতা-মাতা জানান, ঘটনাটি বৃহস্পতিবারের।
শিশুর বাবা মোহাম্মদ ইরশাদ জানান, জানতে পেরেছেন, পড়া মুখস্ত করতে না পারায় তার ছেলেকে একে একে থাপ্পড় দিতে বাকি শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষিকা।
ভিডিও প্রকাশের পর পুলিশ ব্যবহারকারীদের এটি ছড়িয়ে না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। শিশুটির বাবা বলেন, এই ঘটনা দেশে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর পরিণতি। শিক্ষিকা এই ঘটনায় ক্ষমা চাইলেও তিনি নিজের সন্তানকে আর এই স্কুলে রাখবেন না বলে জানান ইরশাদ।
পুলিশ জানিয়েছে, শিশু ও তার অভিভাবকের বিবৃতি নেওয়ার পর মামলা নথিভুক্ত করা হবে।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা দেশে চলমান ইসলাম বিদ্বেষকে এর জন্য দায়ী করেছেন।
মাদারিং আ মুসলিম বইয়ের লেখক নাজিয়া ইরুম বলেন, একটি প্রজন্ম এমন একটি সমাজে বেড়ে উঠছে যা শত্রুতা এবং ঘৃণাকে স্বাভাবিক করেছে। তিনি দেশে ক্রমবর্ধমান ঘৃণার জন্য গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক অবস্থাকে দায়ী করেছেন। যেখানে 'শুধুমাত্র সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিয়ে ক্রমাগত নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে।'
এ ঘটনার সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'নিরীহ শিশুদের মনেও বৈষম্যের বিষ বপন করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মতো পবিত্র একটি জায়গাকে ঘৃণার বাজারে পরিণত করা হয়েছে। একজন শিক্ষক দেশের জন্য এর চেয়ে খারাপ আর কিছু করতে পারেন না। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এই একই কেরোসিন ছড়িয়ে দেশের প্রতিটি কোনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।'