বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সীমিত করার চিন্তা করছে কানাডা
ক্রমবর্ধমান আবাসন ঘাটতি মোকাবিলার লক্ষ্যে কানাডার সরকার দেশটিতে পড়তে যাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করার কথা বিবেচনা করছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার অর্থনৈতিক এজেন্ডায় অভিবাসন বৃদ্ধিকে মূলকেন্দ্রে রেখেছিলেন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সীমিত করা হলে তা হবে ট্রুডোর নীতিতে বড় পরিবর্তন। ট্রুডো আবাসন সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন — এমন সমালোচনা ক্রমশ বাড়ছে দেশটিতে।
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজসমূহে এ বছর বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে দেশটিতে আবাসন চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে।
এ আবাসন সংকটের কারণে কানাডায় এখন বাড়ির দাম ও ভাড়া বহুলাংশে বেড়ে গিয়েছে।
দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক মিলার গত মাসে বলেছিলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের কানাডায় প্রবেশের সংখ্যা কমাতে সরকার বিভিন্ন বিকল্প উপায় বিবেচনায় নিচ্ছে। আর তার মধ্যে একটি হচ্ছে 'ভিসা সীমিত করে দেওয়ার সম্ভাবনা'।
কানাডার সরকার দেশটিতে অভিবাসনের জন্য এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য ধরে এগোচ্ছে। এ বছর দেশটি চার লাখ ৬৫ হাজার বিদেশিকে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের মর্যাদা দিতে চাচ্ছে। আর ২০২৫ সালের জন্য এ লক্ষ্য পাঁচ লাখ অভিবাসীকে আনার।
জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, অভিবাসীদের কানাডায় বসবাসের সুযোগ দেওয়া দেশটির অর্থনীতির ভবিষ্যতের একটি কেন্দ্রীয় অনুষঙ্গ। আর কানাডা যেসব অভিবাসীদের আনার চিন্তা করছে তারা স্বাস্থ্যসেবা, ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে খুবই দক্ষ।
দেশটিতে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ার কারণে আবাসন চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বে আবাসন ব্যয় কানাডায় সবচেয়ে বেশি। গত বছর দেশটিতে ভাড়া দেওয়ার জন্য খালি বাড়ির হার কমে ১ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছিল।
কানাডার ইন্টারন্যাশনাল শিখ স্টুডেন্টস' অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রতিষ্ঠাতা জসপ্রীত সিং বলেন, বাইরে থেকে কানাডায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীরাও এখানকার অন্য বাসিন্দাদের মতো একই উচ্চ ভাড়া দিয়েই থাকেন।
'যেসব শিক্ষার্থী তিন বছর আগে একটি বেজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টের জন্য এক হাজার ডলার ভাড়া দিতেন, তারা এখন একই বাসার জন্য দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া গুনছেন। তারাও ভুক্তভোগী কিন্তু,' বলেন তিনি।
কানাডায় শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করারও সুযোগ রয়েছে। গত বছর শিক্ষার্থী-ভিসাধারী বিদেশিরা সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন তার ওপর থেকে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
তখন কানাডার সরকার এক ঘোষণায় বলেছিল, দেশটির চলমান শ্রমশক্তির ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ বছরের শেষ দিকে শিথিল কর্মঘণ্টার এ নিয়মের মেয়াদ শেষ হবে।
ইউনিভার্সিটি অভ টরোন্টো, ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি ইন মন্ট্রিয়ালসহ কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার গত দশকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ইউনিভার্সিটিজ অভ কানাডা-এর প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল্যান্ডন।
তিনি বলেন, ভিসা সীমিত করা হলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশের সঙ্গে কানাডার প্রতিযোগী-সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।