সিঙ্গাপুরে ১৯৮৬ সালের পর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি মামলার জেরে মন্ত্রীর পদত্যাগ
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সিঙ্গাপুরের পরিবহণমন্ত্রী এস ঈশ্বরন পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতার পদ থেকে ইশ্বরানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
লির কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এটি জানানো হয়েছে। যদিও ইশ্বরন তার বিরুদ্ধে আনা ২৭ টি অভিযোগের সবকটিই অস্বীকার করেছেন। এসবের মধ্যে ঘুষ হিসেবে লন্ডনে গানের অনুষ্ঠান ও ফুটবল ম্যাচের টিকিট সংগ্রহের মত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে এক বিবৃতিতে লি বলেন, "আমি দল ও সরকারের সততা ও দুর্নীতিহীনতার জন্য আমাদের খ্যাতি সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সিঙ্গাপুরবাসী এর চেয়ে কম কিছু আশা করে না।"
৬১ বছর বয়সী ঈশ্বরন ১৯৮৬ সালের পর দেশটির প্রথম উচ্চপদস্থ মন্ত্রী যিনি দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে তালিকাভুক্ত হলেন। গত জুলাই মাসে তাকে এবং ধনকুবের ওং বেং সেংকে এমন একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। স্বচ্ছ প্রশাসনের জন্য সিঙ্গাপুরের খ্যাতি থাকলেও এ ঘটনা এখন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং প্রায় দুই দশক পর নেতৃত্ব থেকে সরে আসতে চাইছেন। ৭১ বছর বয়সী লি আগামী নভেম্বরের মধ্যে তার ডেপুটি লরেন্স ওংয়ের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছেন।
লি'র কাছে লেখা পদত্যাগপত্রে ঈশ্বরন লিখেছেন, "আমি আমার বিরুদ্ধে আনিত এ অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করছি এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।"
যদিও এ রাজনীতিবিদকে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির দুটি অভিযোগ। সরকারি কর্মচারী হয়েও ব্যবসায়িক লেনদেনকারীর কাছ থেকে 'মূল্যবান জিনিস' আদায় এবং ন্যায়বিচারে বাধা সৃষ্টির একটি অভিযোগ। দোষী সাব্যস্ত হলে তার জরিমানা ও কারাদণ্ড হতে পারে।
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ইউজিন ট্যান বলেন, "এটি শুধু ঈশ্বরন ও পাবলিক প্রসিকিউটরের জন্য আইনি লড়াই নয়। ভোটারদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের এখন রাজনৈতিক লড়াই চলছে এটি প্রমাণে যে, দেশে একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়পরায়ণ প্রশাসন রয়েছে।"
এই দুর্নীতি কেলেঙ্কারি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বিতর্কের ধারাবাহিকতার অংশ যা পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই বিতর্কের ফলে দুজন আইনপ্রণেতা অপ্রত্যাশিত পদত্যাগ করে। উপরন্তু, গত সেপ্টেম্বরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গোহ চক টংয়ের ছেলে এবং আরও তিনজনের বিরুদ্ধে ফলস ট্রেডিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলোর সম্মিলিত প্রভাব পিএপির রাজনৈতিক দৃশ্যপট এবং খ্যাতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং এবং অশান্ত সময় তৈরি করেছে।
ঈশ্বরন এবং ওং বছরের পর বছর ধরে একসাথে কাজ করেছেন। ধারণা করা হয়, ওংয়ের সিঙ্গাপুরে ফর্মুলা ওয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্স আনার ক্ষেত্রে ঈশ্বরনের ভূমিকা রয়েছে। ঈশ্বরন সিঙ্গাপুর এফ-১ নাইট রেসের শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন।
অভিযোগপত্রে প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওংয়ের কাছ থেকে বিশেষ চিকিৎসা বা সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ওয়েস্ট এন্ড মিউজিক্যালের টিকিট (কিঙ্কি বুটস, বুক অফ মরমন, ওয়েট্রেস), ইউকে ফুটবল ম্যাচের টিকিট, ওংয়ের ব্যক্তিগত জেটে একটি ফ্লাইট, সাড়ে তিন হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ফোর সিজনস দোহায় এক রাত থাকা এবং সিঙ্গাপুরে ফর্মুলা ওয়ান ইভেন্টের টিকিট। এগুলো প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তি তৈরি করে, যা তার অনুচিত বা প্রশ্নবিদ্ধ আচরণের ইঙ্গিত দেয়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের চেম্বার জানিয়েছে, ঈশ্বরনের বিরুদ্ধে মামলা শেষ হওয়ার পর ওং ও অন্যদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে ওংয়ের মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এছাড়া ঈশ্বরন জানান, জুলাই মাস থেকে তিনি তার বেতন-ভাতা ফেরত দেবেন। বর্তমানে তার মূল বেতন ৪৬,৭৫০ থেকে কমিয়ে ৮,৫০০ সিঙ্গাপুর ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।