ইসরায়েলকে ‘গণহত্যায় সহায়তা’ করায় জার্মানির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে নিকারাগুয়ার মামলা
সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্র ইসরায়েলকে সহয়তা প্রদান করার মাধ্যমে জার্মানি গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান 'গণহত্যাকে সমর্থন ও সহায়তা করছে'— আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জার্মানির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে মামলা করেছে উত্তর আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়া।
সোমবার (৮ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে জার্মানির বিরুদ্ধে মামলা করার পর ইসরায়েলকে অস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা থেকে বার্লিনকে বিরত রাখতে বিচারকদের প্রতি জরুরি ব্যবস্থা আরোপ করার দাবি জানিয়েছে নিকারাগুয়া।
উদ্বোধনী বিবৃতিতে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত নিকারাগুয়ান রাষ্ট্রদূত এবং নিকারাগুয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দেওয়া কার্লোস জোসে ফ্রান্সিসকো আর্গুয়েলো গোমেজ বলেছেন "ফিলিস্তিনে গণহত্যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন হচ্ছে।"
এমন পরিস্থিতিতে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশগুলোকে অবশ্যই 'অপরাধীকে সহায়তা করা' থেকে বিরত থাকতে হবে।
গোমেজ আরো বলেন, "গাজার ক্ষেত্রে জার্মানি 'আত্মরক্ষা এবং গণহত্যার মধ্যে পার্থক্য করতে' পারেনি।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, "যদি ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড চলতে থাকে যেটি তারা রাষ্ট্র হিসেবে জন্মের পর থেকে করে আসছে এবং তারা জার্মানির মতো দেশের সমর্থন পায়, তাহলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনিদের একটি নতুন প্রজন্ম আবারো জেগে উঠবে।"
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের শুনানির পর নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় জার্মান আইনী প্রতিনিধি তানিয়া ভন উসলার-গ্লেইচেন নিকারাগুয়ার অভিযোগকে 'পক্ষপাতদুষ্ট' বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, জার্মানি আগামীকাল অভিযোগগুলো খণ্ডন করতে উন্মুখ হয়ে আছে।
আদালতে দাখিল করা ৪৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে নিকারাগুয়া যুক্তি দিয়েছে, জার্মানি গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে করা ১৯৪৮ সালের 'জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন' লঙ্ঘন করছে। এতে বলা হয়েছে, সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে এবং বর্তমানে ইউএনআরডব্লিউএ-এর (ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা) তহবিল স্থগিত করার মাধ্যমে জার্মানি গণহত্যাকে সহজ করে দিয়েছে।
জার্মানি ১৫টি পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম যেটি ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সাথে কিছু কর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ এনে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন উদ্বাস্তুদের জন্য কাজ করা ইউএনআরডব্লিউএ-এর তহবিল স্থগিত করেছিল৷
আইসিজেতে দায়ের করা মামলার নথি অনুসারে, নিকারাগুয়া জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের প্রতি বার্লিনকে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে এবং ইউএনআরডব্লিউএ-এর তহবিল পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছে।
গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের চলমান অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির কারণে দেশের ভেতর শুলজের সমালোচনা চলছে। জার্মান সরকারের প্রতি 'ইসরায়েলি সরকারকে অবিলম্বে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার' আহ্বান জানিয়ে চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ ও অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রীদের চিঠি দিয়েছেন জার্মানির সরকারি চাকরিজীবীদের একাংশ।
২০২৩ সালে ইসরায়েলে ৩৫৪ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন দেয় জার্মানি, যা আগের বছরের তুলনায় দশগুণ বেশি। দেশটি ইসরায়েলের ৩০ শতাংশ সামরিক অস্ত্রের সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্য থেকে।
গবেষকরা দেখেছেন, ইসরায়েলের মোট অস্ত্রের ৯৯ শতাংশই জোগান দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। জার্মানি ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী।
এদিকে নিকারাগুয়ার মামলার সমালোচকরা দেশটির মানবাধিকার সংক্রান্ত রেকর্ডকে তুলে ধরেছেন। নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার সরকার বিরোধীদের জেলে দিয়েছে এবং দেশটিতে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যের ইউএন মিশন জাতিসংঘের কাছে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়