ইতালিতে সস্তায় বাড়ি! দাম মাত্র ৩ ইউরো!
ইতালির শহরগুলো এক ইউরোতে বাড়ি কেনার লোভনীয় সুযোগ দিয়ে নতুন বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু শহর বাড়ি বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে পেতে খুব একটা সফল না হলেও কিছু শহর ভালো সাফল্য পেয়েছে।
সাম্বুকা দি সিসিলিয়া নামে ইতালির সিসিলির একটি শহর ২০১৯ এবং ২০২১ সালে বাড়ি বিক্রির মাধ্যমে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছিল। এখন শহরটি মাত্র ৩ ইউরোর বিনিময়ে আবারো বাড়ি বিক্রি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
শহরটির নবনির্বাচিত মেয়র জিউসেপ্পে ক্যাসিওপ্পো সিএনএনকে বলেছেন, বিদেশিরা বাড়ি কিনতে শহরটিতে ভীর জমাচ্ছেন।
ক্যাসিওপ্পো জানিয়েছেন, শহরটির পুরানো সারাসেন অঞ্চলের বাড়িগুলো বিক্রির জন্য কাঠামোগতভাবে ভালো হলেও কিছু সংস্কারের প্রয়োজন।
সাম্বুকা ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল যখন সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, শহরটিতে এক ইউরোর বিনিময়ে ১৬টি বাড়ি বিক্রি হবে। দুই বছর পর, দ্বিতীয়বারের মতো দুই ইউরোতে বাড়ি বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
এমন প্রস্তাবনা মধ্যপ্রাচ্য সহ সারা বিশ্ব থেকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে ২০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২১.৮ মিলিয়ন ডলার) বাড়িয়েছে। এ অর্থ এসেছে নতুন দোকান এবং বিল্ডার, স্থপতি, সার্ভেয়ার, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার এবং নোটারিদের সাথে চুক্তি থেকে।
মেয়র জিউসেপ্পে ক্যাসিওপ্পো বলেন, "টাউন হলের মালিকানাধীন বাড়িগুলো বেসরকারি রিয়েল এস্টেট সেক্টরকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। যারা নিলামে জিততে পারেনি, তারা এর পরিবর্তে সস্তা বাড়ি কিনেছে। এখন পর্যন্ত ২৫০টি বাড়ি বিক্রি হয়েছে।"
সাম্বুকার সাফল্যের প্রধান কারণ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিক্রি হওয়া পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর মালিক। প্যাট্রিকার মতো ইতালির অন্যান্য শহরগুলোও একইভাবে বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করেও সফল হয়নি কারণ তারা খালি বাড়ি বিক্রির অনুমতি পাওয়ার জন্য প্রাক্তন মালিকদের খুঁজে পায়নি।
১৯৬৯ সালে বেলিস উপত্যকায় ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সাম্বুকার কর্তৃপক্ষ শহরের পরিত্যক্ত বাড়িগুলো দখল করে নেয়। স্থানীয়রা বাড়িগুলো ছেড়ে চলে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ সেগুলোর দখল নেয় একটি বিশেষ আইন এসব বাড়ির মালিকানা টাউন হলকে দিয়েছে, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রয়োজন ছাড়াই দ্রুত বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়।
এখানের প্রতিটি বাড়ি এক ও দুই থেকে তিন বেডরুমের বাড়ি যার আয়তন ৫০ থেকে ৮০ বর্গ মিটার পর্যন্ত। বাড়িগুলো সোনালি-বাদামী পাথর দিয়ে তৈরি এবং এক থেকে তিন তলা পর্যন্ত উঁচু। অনেক বাড়িতে লোহার তৈরি বারান্দা, প্যানোরামিক ছাদ এবং আলংকারিক খিলান ও জানালা সহ সবুজ রঙের কাঠের দরজা রয়েছে।
ভালো অবস্থায় আছে এমন কিছু বাড়িতে লেবু গাছ এবং পুরানো টালির মেঝে সহ ছোট উঠোন রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ বাড়ির উল্লেখযোগ্য মেরামত প্রয়োজন এবং সেগুলো পুরানো, ভাঙা আসবাবপত্র দিয়ে ভরা।
মেরামতের ও সংস্কারের খরচ প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ ডলার থেকে শুরু হয় এবং বিলাসবহুল বানানোর জন্য প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ডলার খরচ হতে পারে। এক আমেরিকান দম্পতি তাদের কেন বাড়িকে বিলাসবহুল করতে একটি অভ্যন্তরীণ লিফটও স্থাপন করেছিলেন।
পূর্ববর্তী বিক্রয় থেকে অনেক ক্রেতা আশেপাশের অতিরিক্ত সম্পত্তি ক্রয় করে সেগুলোকে সেগুলিকে বড় বাড়িতে রূপান্তরিত করেন।
সাম্বুকা শহরের স্থানীয়রা বিদেশিদের উচ্চ চাহিদা মেটাতে গ্যারেজ এবং পুরানো অ্যাটিক বিক্রি করতে শুরু করেছে। অনেক ক্রেতা আমেরিকান হওয়ায় শহরটির প্রবীণরাও সিসিলিয়ান উচ্চারণে ইংরেজিতে কথা বলেন।
২০১৯ সালের আগে শহরটিতে বিদেশিরা খুব বেশী না আসলেও এখন সাম্বুকার একটি উল্লেখযোগ্য প্রবাসী সম্প্রদায় রয়েছে। ডিজিটাল কর্মীদের আকৃষ্ট করার জন্য টাউন হলটি 'রিমোট ওয়ার্ক' এর সুযোগ দিচ্ছে। এছাড়া বিনামূল্যে থাকার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি আরো ভালো ওয়াই-ফাই সুবিধা দিচ্ছে।
মেয়র ক্যাসিওপ্পো বলছিলেন, "আমাদের শহরটিকে এখন অবশ্যই মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে।"
সাম্বুকা সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বাড়িগুলি নিলাম করবে। নির্ধারিত সময়সীমার পরে একজন বিচারকের সামনে সিলমোহর করা খামে দর রাখা হবে।
অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই ৫ হাজার ইউরো জমা দিতে হবে। হারলে আমানত ফেরত দেওয়া হয়। তারা জিতলে ৫ হাজার ইউরো তাদের জমার গ্যারান্টি হয়ে যাবে।
আগে নিয়ম ছিল, তিন বছরের মধ্যে বাড়ির সংস্কার সম্পূর্ণ না করলে ক্রেতারা তাদের আমানত হারাবে। কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে টাউন হল কর্তৃপক্ষ সময়সীমার ব্যাপারে নমনীয় হয়েছে।
আগে বাড়িগুলো ১ থেকে ২৫ হাজার ইউরোতে বিক্রি হত, যার মধ্যে বেশিরভাগের দাম ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ইউরোর মধ্যে থাকতো।
বাড়ি কিনতে আগ্রহীরা বাড়ির ছবি, বিবরণ এবং আবেদনপত্র টাউন হলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়