ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন মোদি
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আজ শনিবার (২২ জুন) নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে তাঁদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এসময় ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। সমুদ্রসীমা থাকা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতেই এ উদ্যোগ। মোদি বলেন, ঢাকার সাথে চুক্তি তাঁর দেশের প্রতিবেশী প্রথম নীতিরই অংশ।
নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে মোদি ও হাসিনার উপস্থিতিতে ঢাকা ও নয়াদিল্লি ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এসব সমঝোতা স্মারকের মধ্যে সাতটি নতুন। অন্য তিনটি নবায়ন করা হয়েছে।
বৈঠকের পরে শেখ হাসিনার সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন মোদি। এসময় তিনি বলেন, ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতি, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি, ভিশন সাগর এবং ইন্দো-প্যাসিফিক রূপকল্পের কেন্দ্রে রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ।
"আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরালো করতে, সামরিক (সরঞ্জাম) উৎপাদন থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীগুলোর আধুনিকায়ন নিয়ে আমাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করা এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিষয়েও আমরা একইরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বিমসটেক-সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব" বলছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
মোদি বলেন, জনকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে দুই দেশ।
মোদিকে উদ্ধৃত করে বার্তাসংস্থা এএনআই জানায়, তিনি বলেছেন, উভয় দেশের মধ্যে ভারতীয় রুপিতে লেনদেন চালু হয়েছে। গঙ্গা নদী দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিশ্বের দীর্ঘতম নৌবিহার সফলভাবে চালু করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণকাজও সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানির বিষয়টি জ্বালানিখাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মোদি বলেন, "মাত্র এক বছরে এতগুলো খাতে বড় বড় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার ঘটনা আমাদের বেগবান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও তার পরিধিকে তুলে ধরছে।"
লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার পর এটিই তাঁর বাংলাদেশের সরকার-প্রধানের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এপ্রসঙ্গে মোদি বলেন, "গত এক বছরে আমরা ১০টি বৈঠক করেছি। তবে এবারের বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তৃতীয় মেয়াদে আমাদের সরকার গঠনের পরে প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।"
যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার উল্লেখ করে বলেন, "১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট সম্পর্ককে বাংলাদেশ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত বিকশিত এবং দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আজ আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা দুই দেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।"