চাসিভ ইয়ার থেকে পিছু হটল ইউক্রেন, রাশিয়ার আরো অগ্ৰসরের পথ উন্মুক্ত হলো
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/07/05/2024-07-01t102021z-2032801657-rc29m8ah64o2-rtrmadp-3-ukraine-crisis-donetsk-region-ezgif.com-webp-to-jpg-converter.jpg)
পূর্ব ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি শহর চাসিভ ইয়ারের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনারা। এই কৌশলগত অর্জনের ফলে সামনের দিকে এগোতে থাকা রুশ সেনাদের ঠেকানো কঠিন হবে ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য।
তুলনামূলকভাবে ছোট্ট শহর চাসিভ ইয়ার এই যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত কয়েক মাসের তীব্র লড়াইয়ে শহরটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সমতল থেকে বেশ উঁচু এই শহরটিকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের যে অংশগুলো এখনও ইউক্রেনীয়দের হাতে রয়েছে, তার প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শহরটির উত্তরে নিচু ক্রামাতোরস্ক এবং স্লোভিয়ানস্ক এবং পশ্চিমে দিকে ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চল।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সেনাদের পূর্বাঞ্চলীয় চাসিভ ইয়ার জেলার দখল নেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, নিজেদের প্রতিরক্ষামূলক ঘাঁটিগুলো ধ্বংস হওয়ার পরে কিয়েভ বাহিনী এই শহর থেকে পিছু হটে গেছে।
ইউক্রেনের 'খোরতিৎসিয়া' অপারেশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক গ্রুপিংয়ের মুখপাত্র নাজার ভোলোশিন ইউক্রেনের জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, 'গতকাল সারাদিনে চাসিভ ইয়ার এলাকায় প্রায় সব ধরনের যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে ২৩৮টি হামলা চালানো হয়েছে।'
অন্যদিকে ইউক্রেনীয় পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ডিপস্টেট বলেছে, রুশ বাহিনী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই রাস্তাটি বাখমুতের সঙ্গে সংযুক্ত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কনস্তানতিনিভকা ও পোকরোভস্কের পাশাপাশি এই বাখমুত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এই রাস্তাটি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইন।
চাসিভ ইয়ার শহরের কিছু অংশ থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার কিয়েভের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ গত কয়েক মাসের লাগাতার রুশ হামলার পরে কিয়েভ এখন তার ফ্রন্টলাইনকে স্থিতিশীল করার দিকে মনোনিবেশ করছে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে পশ্চিমা সামরিক সহায়তায় বিলম্বের কারণে কিয়েভের গোলাবারুদের তীব্র ঘাটতির সুযোগ নিয়ে মস্কো পূর্ব ফ্রন্টলাইনের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষারেখা ভেদ করার চেষ্টা করছে।
এমনকি কিয়েভকে পূর্ব থেকে কিছু সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য করতে তারা উত্তর ইউক্রেনে আকস্মিক আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ শুরু করে।
কিন্তু সম্প্রতি ফ্রন্টলাইনে পশ্চিমা অস্ত্র আসতে শুরু করায় ইউক্রেনের পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করেছে।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কাছে রাশিয়ার সম্ভাব্য বড় ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে এবং পূর্ব ফ্রন্টকে এখন আরও স্থিতিশীল বলে মনে হচ্ছে।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/07/05/2024-07-03t132543z-1570568077-rc2km8ab9yfc-rtrmadp-3-ukraine-crisis-medics-ezgif.com-webp-to-jpg-converter.jpg)
উঁচু ভূমি
এদিকে, ইউক্রেন জোর দিয়ে বলছে যে এখনও চাসিভ ইয়ারের পশ্চিম অংশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রয়েছে এবং পূর্ব অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার তাদের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল।
পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ডিপস্টেট বলেছে, ডিস্ট্রিক্টটি 'পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে' এবং 'এর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করলে' কেবল ক্ষয়ক্ষতিই বাড়বে।
তারা আরও বলেনছে, 'এখন নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে ছেড়ে দেওয়াই যৌক্তিক, যদিও সিদ্ধান্তটি নেওয়া কঠিন।'
শহরটির যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১২ হাজার, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এদের অধিকাংশই আত্মগোপনে ছিল।
দোনেৎস্কের আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান ভাদিম ফিলাশকিন গত মে মাসে বলেছিলেন, প্রায় ৬৭৯ জন বেসামরিক লোক এখনও চাসিভ ইয়ারে রয়েছেন এবং তারা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে অস্বীকার করছেন।
এই যুদ্ধ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কনরাড মুজিকা সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'চাসিভ ইয়ার দখলে নিলে রাশিয়ানরা ওই এলাকায় আরও (ফার্স্ট পারসন ভিউ) ড্রোন, ড্রোন অপারেটর এবং আর্টিলারি আনতে পারবে এবং এটি তাদেরকে ইউক্রেনীয় সেনাদের ওপর স্থল হামলা ও ড্রোন হামলা চালাতে সুবিধাজনক অবস্থান দেবে।'
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই এ কথা জানাতে রাখঢাক করেনি যে তিনি চান তার বাহিনী পুরো দোনেস্ক নিয়ন্ত্রণ করুক।
২০১৪ সালে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীরা অঞ্চলটির পূর্বাঞ্চলের শহর ও নগরগুলোর সরকারি ভবনগুলো দখল করে নিলে অঞ্চলটি অর্ধেক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর রাশিয়া দোনেৎস্কের অন্যান্য অংশের নিয়ন্ত্রণ নিলেও, পুরো অঞ্চল দখল করতে পারেনি। যদি চাসিভ ইয়ার রাশিয়ার হাতে চলে যায়, তাহলে তা পশ্চিমের বড় শহরগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
মুজিকা বলেন, 'ক্রামাতোরস্কের পথে চাসিভ ইয়ার সবচেয়ে বড় জনবসতি। সুতরাং রাশিয়ানরা যদি এটি দখল করে নেয় তবে ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ার আক্রমণের গতি হ্রাস করতে শহুরে বসতিগুলোর উপর নির্ভর করার সুযোগ পাবে না।'
কারণ খোলা ভূখণ্ডের তুলনায় শহুরে পরিবেশের মধ্য দিয়ে সৈন্যদের অগ্রসর হওয়া অনেক বেশি কঠিন।
চাসিভ ইয়ার নিজেই গত কয়েক মাস ধরে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
চাসিভ ইয়ার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) পূর্বে অবস্থিত বাখমুত বেশ কয়েক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পরে ২০২৩ সালের মে মাসে রাশিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিল।
মস্কো যখন শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, ততদিনে এটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি