এবার পাকিস্তানে বিপজ্জনক এমপক্স ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত
গতকাল (শুক্রবার) পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত কমপক্ষে একজন রোগী সনাক্ত করেছে। এদিকে দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া কর্তৃপক্ষ এমন তিনজন সম্ভাব্য রোগীর তথ্য প্রকাশ করে পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
আফ্রিকার দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ছোঁয়াচে এমপক্স ভাইরাস। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও)। মূলত কঙ্গো থেকেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। পূর্বে মাংকিপক্স নামেই পরিচিত ছিল এই ভাইরাস।
এদিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ছোঁয়াচে এমপক্স ভাইরাস ইউরোপেরও শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারির এক দিন পরই গত বৃহস্পতিবার সুইডেনে প্রথম এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। সুইডেনের জনস্বাস্থ্য সংস্থা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পাকিস্তানের মারদান জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাভেদ ইকবাল জানান, আক্রান্ত ব্যক্তিটি সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে এসেছে। বর্তমানে দেশের ভেতর তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইকবাল জানান, কিছুদিন পূর্বে আক্রান্ত রোগী পেশাওয়ারের একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়েছিলেন ও উপদেশ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এরপর তিনি মারদান জেলার নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন এবং অন্যত্র ভ্রমণ করেন।
ইকবাল বলেন, "আমরা যখন মারদানে সংক্রামিত ব্যক্তির বাড়িতে ভ্রমণ করি, তখন সেটি তালাবদ্ধ ছিল। প্রতিবেশিরা জানান, পরিবারটি ডির শহরে গিয়েছে। আমরা ডির শহরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সেখানেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আক্রান্ত ব্যক্তির সূত্র ধরে কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হচ্ছে। একইসাথে সতর্কতা জারি করে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে নিয়ে নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ চালানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাজিদ শাহ বলেন, "এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দেশজুড়ে জনস্বাস্থ্য ও সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নগুলি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।"
মূলত গত বছরের জানুয়ারি মাসে কঙ্গোতে এমপক্স ভাইরাস ছড়িয়ে পরে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে কমপক্ষে ২৭ হাজার জনের সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ১১০০ জনের; যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। শুধু চলতি বছরেই রোগটিতে আফ্রিকার দেশটিতে ৫৪৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এমপক্স ছড়ায়। এটি সঙ্গম, ত্বকের সংস্পর্শ, কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। এতে ফ্লুর মতো উপসর্গের পাশাপাশি পুঁজ ও ক্ষত সৃষ্টি করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাব সামান্য দেখা গেলেও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ১০০ জনের মধ্যে গড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, "আফ্রিকা এবং এর বাইরে আরও দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই উদ্বেগজনক। এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক।"
এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে; যথা: ক্লেড-১ এবং ক্লেড-২। ক্লেড ১ আবার দুটি ধরনের রয়েছে এবং সুইডিশ কেসটিকে ক্লেড ১-বি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে ক্লেড ২-এর তুলনামূলক মৃদু সংক্রমণ চলাকালে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. ব্রায়ান ফার্গুসন বলেন, "ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে সম্ভবত আরও সংক্রমণ ঘটতে পারে। কারণ বর্তমানে এমপক্সের ঘটনা বন্ধ করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে আফ্রিকায় প্রাদুর্ভাবের তীব্রতা এবং বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে এটি অবাক হওয়ার মতো নয়।"
গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে ভাইরাসটির ধরনে পরিবর্তন আসে। মিউটেশনের ফলে ক্লেড ১বি নামক একটি ধরন সৃষ্টি ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এই নতুন রূপটিকে একজন বিজ্ঞানী এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক' হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান