দুই সপ্তাহের মধ্যে ইমরান খানকে মুক্তি দিতে হবে, ইসলামাবাদের জনসমাবেশে পিটিআই-এর হুঁশিয়ারি
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এক জনসভায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্ব জেলে বন্দি দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান এবং ঘোষণা দেন, তারা ইমরান খানের সামরিক বিচার মেনে নেবে না।
খাইবার পাখতুনখোয়ার (কেপি) মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গন্ডাপুর পিটিআই-এর জনসভায় বলেন, "যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে ইমরান খান মুক্তি না পান, আমরা গিয়ে তাকে মুক্ত করে আনব।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি ইমরান মুক্তি না পান তাহলে পিটিআই-এর "বাগ্যুদ্ধ" একটি "রক্তাক্ত সংগ্রাম"-এ পরিণত হতে পারে।
আলী আমিন প্রতিপক্ষদের হুমকি দিয়ে বলেন, যদি ইমরান খান মুক্তি না পান তাহলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কেপিতে মামলা করবেন। "এখন কেপি সরকার সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং আমি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করব," তিনি বলেন।
তিনি আরও জানান, "ইমরানের আইনজীবীরা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা তার পক্ষেই নিষ্পত্তি হয়েছে এবং এখন তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে; নাহলে আমরা জেলে গিয়ে তাকে মুক্ত করব।"
আলী আমিন গন্ডাপুর সামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তারা ইমরান খানের মুক্তি ঠেকাতে পারবে না। তিনি যে সমাবেশে মন্তব্যটি করেন সেটি সপ্তাহব্যাপী প্রস্তুতির পরেও ইসলামাবাদ প্রশাসনের বাধা এবং অনুমতি না দেওয়ার কারণে কারণে বিলম্বিত হয়েছিল।
বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সন্ধ্যার দিকে জনসভায় একটি বিশাল উপস্থিতি দেখা যায়। আলী আমিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফের সামরিক বিচারের সম্ভাবনার মন্তব্যের জবাবে বলেন, "আপনার বাবা অথবা যাদের আপনি আপনার বাবা মনে করেন, তারা আমাদের ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন না।"
তিনি সামরিক বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, পিটিআইকে সাবেক আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ "বিয়ের উপহার" হিসেবে দেওয়া হয়নি এবং যারা তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছিল, তারাই তার কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী।
গন্ডাপুর সতর্ক করে বলেন, "আপনারা আপনার বাড়ি ঠিক রাখুন, নাহলে আমরা সামরিক বাহিনীকে ঠিক রাখব। এটি আমাদের প্রতিষ্ঠান, যেখানে আমাদের ভাইরা সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছেন।"
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ৯ মে'র ঘটনার অজুহাতে খানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এবং পরবর্তী জনসভায় লাহোরে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাবি করেন, ৯ মে শুধু একটি অজুহাত ছিল।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, পিটিআই অবিচার বা অত্যাচার সহ্য করবে না এবং শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাবে। আলী আমিন এছাড়াও সতর্ক করে বলেন, অংশগ্রহণকারীদের শীঘ্রই "রক্তাক্ত ত্যাগ" স্বীকার করতে হতে পারে, যা তিনি "বাস্তব মুক্তি" বলে অভিহিত করেন।
পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ব্যারিস্টার গহর আলী খান জনসভায় ঘোষণা করেছেন, তাদের দল ইমরান খানের বিরুদ্ধে নতুন কোনো মামলা সহ্য করবে না। খানকে শীঘ্রই মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, ইমরান খান একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং বলেন, "এটি ১৯৯০-এর দশক নয় যে কাউকে 'মাইনাস' করা যাবে।"
জনসভা আয়োজনের অনুমতি সত্ত্বেও রাজধানীতে পুরোপুরি ব্যারিকেড দিয়ে রাখায় এবং সভার স্থানে পৌঁছানোর সব রাস্তায় কনটেইনার দিয়ে বাধা দেওয়ায় তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সমালোচনা করেন।
এদিকে, পাকিস্তান সরকার পিটিআইয়ের জনসভাকে "ব্যর্থ প্রদর্শনী" হিসেবে বর্ণনা করেছে। সরকারের দাবি, বিরোধী দল মানুষকে কার্যকরভাবে একত্র করতে বা তাদের বাড়ি থেকে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।
দেশটির তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার পিটিআইয়ের সমালোচনা করে বলেন, "লাখ লাখ মানুষ, যাদের আজ বিপ্লব আনার কথা ছিল, তারা কোথায় গেছে কেউ জানে না। তারা কি অন্য কোন দেশে বা অন্য কোন জায়গায় গেছে।"
বড় পরিসরের জনসভা প্রদর্শনের জন্য এবং কম উপস্থিতি ঢাকতে পিটিআই মিথ্যা ভিডিও এবং ভুয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট ব্যবহার করেছে বলে তারার অভিযোগ করেছেন।
তিনি দাবি করেন, পিটিআই নেতৃত্ব দায় এড়াতে পারবে না এবং তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিচার করতে হবে।
আতাউল্লাহ তারার পিটিআইকে সভায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং ২৬ নম্বর চুঙ্গিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের জন্য তাদের দোষারোপ করে দাবি করেন, পিটিআই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, পিটিআইয়ের একটি সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাপুর জনসমাবেশের ব্যর্থতা বুঝতে পেরে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে পৌঁছেছেন।