শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা অস্ট্রেলিয়ার
শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে নতুন আইন করার পরিকল্পনা করছে অস্ট্রেলিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহারের জন্য সর্বনিম্ন বয়সসীমা বেঁধে দেবে দেশটি।
অস্ট্রেলিয়া বলছে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তবে ডিজিটাল অধিকারের সমর্থকরা এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে বলছেন, এ উদ্যোগের ফলে 'আন্ডারগ্রাউন্ডে' বিপজ্জনক অনলাইন কার্যক্রম বেড়ে যেতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিস জানিয়েছেন, তার মধ্য-বামপন্থি সরকার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়স যাচাইয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করবে। এরপর চলতি বছরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করে দেবে।
তিনি এবিসি নিউজকে বলেন, 'আমি বাচ্চাদের ডিভাইস থেকে দূরে রেখে ফুটবল মাঠে, সুইমিং পুলে আর টেনিস কোর্টে দেখতে চাই। আমরা চাই, ওরা যেন রক্ত-মানুষের সঙ্গে মিশে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে পারে, কারণ আমরা জানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সামাজিক ক্ষতি করছে।'
কত বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি আলবানিস। তবে '১৪ থেকে ১৬ বছর বয়স' পর্যন্ত শিশুদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
আলবানিস বলেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সাইবার বুলিংয়ের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তিনি চিন্তিত।
এ আইন কার্যকর হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়সসীমা আরোপ করা বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি হবে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি দেশের এমন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের অনলাইন অধিকার খর্ব করার অভিযোগ ওঠায় সেসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিক কোম্পানি মেটা এবং টিকটকের কোনো কাছ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।
অস্ট্রেলিয়া 'অনলাইনে সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ' দেশগুলোর একটি। এদেশের ২৬ মিলিয়ন জনগণের মধ্যে ৮০ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়।
তবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বয়সসীমা আরোপের এ উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই।
কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল মিডিয়া রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ড্যানিয়েল অ্যাঙ্গাস বলেন, 'এ সিদ্ধান্ত তরুণদের ডিজিটাল জগতে অর্থবহ ও স্বাস্থ্যকর অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করে তাদেরকে নিম্নমানের অনলাইন স্পেসে ঠেলে দিতে পারে।'
সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের গবেষক জর্ডি কফম্যান বলেন, বয়সসীম আরোপ করা হলে যেসব টিনেজার ব্যক্তিগত জীবনের লড়াইয়ের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আশ্রয় নেয়, তারা মিথস্ক্রিয়ার একটা জায়গা হারাতে পারে। এতে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
২০২৩ সালের সিডনি ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি অস্ট্রেলিয়ানদের তিন-চতুর্থাংশই ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে।