বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের 'অনিবার্য' পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, ইসরায়েল তেহরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে চলমান প্রায় এক বছরের সংঘাতে জড়ানোর জন্য ইরানকে উসকানি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। তিনি এ সংঘাতের "অনিবার্য" পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় অংশ নিতে এসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, "আমরা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার কারণ হতে চাই না। কারণ এর পরিণতি অনিবার্য হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই, আমরা যুদ্ধ চাই না। ইসরায়েলই এ সামগ্রিক সংঘাত সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।"
মাসুদ পেজেশকিয়ান এ বছরের জুলাই মাসে একটি বাস্তববাদী পররাষ্ট্র নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় চালানো "ইসরায়েলের গণহত্যা" নিয়ে নীরব থাকার জন্য অভিযুক্ত করেন।
গতকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েল, যা প্রায় এক বছরের সংঘাতে দেশটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। হামলার পর পেজেশকিয়ানের এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত সমাধানের আহ্বান এসেছে।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ-এর চলমান সংঘাতে ইরান যোগ দেবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, "নিজেদের অধিকার ও আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করছে, এমন যে কোনো গোষ্ঠীকে আমরা রক্ষা করব।" তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
দুই দেশের সীমান্তবর্তী শহর ও গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, কারণ ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রায় প্রতিদিন লড়াই চলছে। ইসরায়েল বলছে, তারা একটি কূটনৈতিক সমাধান চায়, যা হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেবে।
তবে সর্বাত্মক সংঘাত এড়াতে চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই বন্ধ হবে না। গাজা যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা কয়েক মাসের জটিল আলোচনার পর অচলাবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের আঞ্চলিক নীতি নির্ধারণ করে অভিজাত ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড, যারা শুধু দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করে।
পেজেশকিয়ান গত মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইরানের ইসরায়েল-বিরোধী অবস্থান এবং অঞ্চলজুড়ে চলমান প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জুলাই মাসের শেষের দিকে ইরানের মাটিতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে পেজেশকিয়ান বলেন, "আমরা উপযুক্ত সময় এবং স্থানে, উপযুক্তভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো।"
হানিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তেহরান এবং হামাস উভয়েই ইসরায়েলকে দায়ী করেছে, যেটি তেহরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছিল।
পেজেশকিয়ান বলেন, "আমাদের জানানো হয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে, তবে সেই সপ্তাহটি কখনো আসেনি এবং ইসরায়েল তাদের আক্রমণ বৃদ্ধি করে চলেছে।"