বালিয়াড়ির আড়ালে ২ মাস প্রস্তুতি, আজ কি আরেক অঘটনের জন্ম দেবে সৌদি আরব?
পড়ন্ত বিকেল। সৌদি আরবের প্রশিক্ষণ পিচের আধমাইল দক্ষিণে দুটো উটের অবয়ব। বালিয়াড়ির ঢাল বেয়ে আগুয়ান উটগুলোর পিঠে আরোহী। ঢালে যানবাহন ও এসইউভির চাকার দাগ। একেবারে পাদদেশে বিশাল শেভ্রোলের বিজ্ঞাপন।
ফুটবল থেকে খানিকক্ষণ দম নিতে চাইলে এই বালিয়াড়িবেষ্টিত নির্জন এলাকায় চলে আসতে পারে যে-কেউ।
এই জায়গাতেই, সিলাইন বিচ রিসোর্টে ঘাঁটি গেড়েছে সৌদি ফুটবল দল। জায়গাটি সৌদি সীমান্ত থেকে মাত্র ২৫ মাইল দূরে। মূল শহরের কোলাহল, ব্যস্ততা এখানে নাক গলাতে পারে না। যদিও দোহা থেকে গাড়িতে চেপে বসলে মাত্র এক ঘণ্টা লাগে এখানে আসতে।
২০১৯ সালে গালফ কাপের আয়োজন করেছিল কাতার। সেখানে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে সৌদি টিম ম্যানেজমেন্ট জানে, শহরের যানজট আর হইহুল্লোড় একটি টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
হার্ভে রেনার্ড তাই তার খেলোয়াড়দের প্রতিদিন এই বালিয়াড়ির শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশে অনুশীলন করান।
রিসোর্ট কমপ্লেক্সে মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত। শুধু সৌদি টিমের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা, তাদের পরিবার, পরিচালন কর্মচারী ও সৈকতের নির্দিষ্ট অংশে প্রবেশের জন্য টিকিট কাটা পর্যটকরা রিসোর্টে ঢুকতে পারেন। স্থানীয় আতিথেয়তার সুফল পুরোটাই তুলেছেন সৌদির ফুটবলাররা।
গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে সমতা ফেরানো গোল করা সালেহ আল-শেহরি বলেন, 'এটা এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি। এই অনুভূতিটাকে যদি স্থায়ী করতে চাই, তাহলে আমাদের গ্রুপ পর্ব উতরাতে হবে।'
শনিবার (২৬ নভেম্বর) গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হবে সৌদি আরব। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ম্যাচের পুনরাবৃত্তি করতে চাইবে তারা।
তিনটি পয়েন্ট পেলেই ১৯৯৪ সালের পর এই প্রথম নকআউট পর্বে পা রাখতে পারবে সৌদি।
শেহরি বলেন, '[প্রথম ম্যাচে] সবকিছুই আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। নিজের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে। এখানে পৌঁছাতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, কারণ কাজটা সহজ ছিল না। আমি মনে করি, আমরা যে এখানে আসার যোগ্য, তা সবার কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি।'
একটি সাফল্য আরও সাফল্য অর্জনের লোভ ধরিয়ে দেয়—এ কথা সত্য। তবে বাস্তবতা সম্পর্কেও সৌদি আরব অবগত। আর যদি একটা ম্যাচও না জেতে, তবু কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন এই দলের খেলোয়াড়রা। গত মাসেই যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদির খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, 'আরামসে খেলো, টুর্নামেন্ট উপভোগ করো।'
তবে শনিবার সৌদি আরবের মানুষ টানটান উত্তেজনা নিয়েই খেলা দেখতে বসবে।
শেহরি বলেন, 'দেশ ও সমর্থকদের গর্বিত করতে হবে আমাদের।'
আর্জেন্টিনার সঙ্গে জেতার রিসোর্টে দেখা গেল একটু ঢিলেঢালা ভাব, উৎসবের আমেজ। ফুটবলাররা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন।
সৌদি স্কোয়াডের বেশিরভাগ সময়ই এই রিসোর্টে কাটে। সৌদি দলের অধিকাংশ ফুটবলারই দেশের লিগে খেলেন। আর্জেন্টিনার সঙ্গে জেতার আগে বাইরের পাঁড় ফুটবলভক্তও সৌদির কোনো ফুটবলারের নাম জানতেন কি না সন্দেহ।
এই অন্ধকারে থাকার সুবিধা নিয়েছেন সৌদির ফুটবলাররা। এই নিরিবিলি বালিয়াড়ির মধ্যে দুই মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সেরেছেন। তৈরি হয়েছেন বিশ্বকে চমকে দিতে।
শেহরি বলেন, পোল্যান্ডের বিপক্ষে শারীরিক শক্তির ব্যবহারই ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে। এবার চ্যালেঞ্জটা একটু অন্যরকম।
গ্রুপ পর্বে ২ লাখের মতো সৌদি সমর্থক উদযাপনের জন্য কাতার সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শেষ ষোলোতে পা রাখতে পারলে এ সংখ্যা নিঃসন্দেহে বাড়বে। আল-শেহরিদের চোখে-মুখে এখন গ্রুপ পর্বের বাধা উতরানোর স্বপ্ন খেলে বেড়াচ্ছে।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান